আকিদা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর
▬▬▬▬◯◍◯▬▬▬▬
❖ প্রশ্ন: ঈমান কাকে বলে?
উত্তর: অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি এবং কাজে বাস্তবায়নকে ঈমান বলে।
❖ প্রশ্ন: ঈমান কি বাড়ে ও কমে?
উত্তর: হ্যাঁ, কথা ও কাজ অনুযায়ী ঈমান বাড়ে ও কমে।
❖ প্রশ্ন: ঈমান বাড়ে ও কমে এ কথার অর্থ কি?
উত্তর: একথার অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি যত বেশী আল্লাহর আনুগত্য করবে এবং ভাল কাজ করবে তার ঈমান তত বৃদ্ধি পাবে। আর যে যত পাপ ও অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়বে তার ঈমান তত কমবে।
❖ প্রশ্ন: ঈমানের মূল স্তম্ভ কয়টি ও কি কি?
উত্তর: ঈমানের মূল স্তম্ভ ৬টি। যথা:
• ১) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস
• ২) ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস
• ৩) আসমানি কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস
• ৪) নবী ও রসূলগণের প্রতি বিশ্বাস
• ৫) পরকালের প্রতি বিশ্বাস
• ৬) ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি বিশ্বাস।
❖ প্রশ্ন: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অর্থ কি?
উত্তর: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অর্থ হচ্ছে, এ বিশ্বাস করা যে আল্লাহ তা’আলা রিজিক দাতা, সৃষ্টিকর্তা, সব কিছুর পরিচালক, আসমান ও জমিনের সমস্ত রাজত্ব এবং কর্তৃত্ব তাঁর হাতে। সমস্ত সৃষ্টি তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি যাবতীয় ইবাদত পাওয়ার একমাত্র অধিকারী; অন্য কেউ নয়। তাঁর রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর নাম এবং তিনি অসংখ্য পরিপূর্ণগুণের অধিকারী।
❖ প্রশ্ন: ফেরেশতা কারা?
উত্তর: তাঁরা আল্লাহর এমন এক সৃষ্টি যাদেরকে তিনি নূর (আলো) দ্বারা সৃষ্টি করেছে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে যে কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন বা যে সব কাজ করতে আদেশ করেছেন তা পরিপূর্ণভাবে পালন করেন। তাতে বিন্দুমাত্র অবাধ্যতা করেন না।
❖ প্রশ্ন: আসমানি গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং নবী-রসূলগণের প্রতি বিশ্বাসের অর্থ কি?
উত্তর: নবী রসূলগণের প্রতি বিশ্বাসের অর্থ হল, আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে অনেক নবী প্রেরণ করেছেন যেমন, নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা, (আলাইহিমুস সালাম) প্রমুখ । তাদের প্রতি আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির দিকনির্দেশনার জন্য আসমানি গ্রন্থ নাজিল করেছেন। যেমন, তাওরাত, ইনজিল, জবুর,ইত্যাদি। নবীগণ তাদের সমসাময়িক মানবগোষ্ঠীকে এক আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য আহবান করেছেন এবং শিরক করা থেকে নিষেধ করেছেন।
নবী-রাসূলদের ধারাবাহিকতার সব শেষে আগমন করেছেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর প্রতি আল্লাহ তা’আলা অবতীর্ণ করেছেন আল কুরআন। এ কুরআনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সকল আসমানি গ্রন্থকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। তিনি এ কুরআনকে পরিপূর্ণভাবে বাস্ববায়ন করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন তাঁর দীর্ঘ ২৩ বছরের নবুওয়তী যিন্দেগীতে। তাই যে কোন ইবাদত অবশ্যই হতে হবে কুরআনের শিক্ষা এবং নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নাহ তথা তাঁর নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসারে।
❖ প্রশ্ন: পরকালে বিশ্বাসের অর্থ?
উত্তর: পরকালে বিশ্বাসের অর্থ হল, একথা বিশ্বাস করা যে, মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলা প্রতিটি জিনিসের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ দিয়েছেন। সে মেয়াদ শেষ হলে সবাইকে অবশ্যই মৃত্যু বরণ করতে হবে। এরপর আল্লাহ সকলকে কবর থেকে পুনরুত্থিত করবেন এবং কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ নেয়ার পর প্রত্যেককে তাদের কাজের যথোপযুক্ত প্রতিদান দিবেন। ভাল কাজের বিনিময়ে তাদেরকে দেয়া হবে ভাল প্রতিদান। আর পাপ ও অন্যায়ের বিনিময়ে প্রদান করবেন কঠিন শাস্তি।
আমাদেরকে এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যে মহান স্রষ্টা এ সুন্দর দেহাবয়বকে যেমনিভাবে প্রথমবার সৃজন করেছেন তিনি পুণরায় তাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।
❖ প্রশ: ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রাত বিশ্বাসের অর্থ কী?
এর অর্থ হল, এ জীবনে ভাল-মন্দ যাই ঘটুক না কেন এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তা অবশ্যই আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা ও পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছে। কারণ, মহাপ্রজ্ঞাবান আল্লাহ তা’আলা প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে অনেক পূর্বেই নির্ধারণ করে রেখেছেন।
❖ প্রশ্ন: “লা-ইলাহা ইল্লালাহ” এর ব্যাখ্যা কী?
উত্তর: ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ অর্থ হল, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নাই। বরং যাবতীয় ইবাদত ও উপাসনা পাওয়ার একমাত্র হকদার তিনি। তিনি ব্যতিরেকে যত কিছুর ইবাদত করা হচ্ছে সবই মিথ্যা এবং ভ্রান্ত।
❖ প্রশ্ন: ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর ব্যাখ্যা কি?
‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর ব্যাখ্যা হল, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশগুলো বাস্তবায়ন করা। তিনি যে সকল সংবাদ ও তথ্য দান করেছেন সেগুলোকে নির্ভুল ও সত্য বলে মেনে নেয়া। তিনি যেসকল বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন বা সতর্ক করেছেন সেগুলো থেকে বিরত থাকা এবং তাঁর দেখানো পদ্ধতি ব্যতিরেকে ইবাদত না করা।
❖ প্রশ্ন: ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ এর কোন শর্ত আছে কি?
উত্তর: তাওহীদের স্বীকৃতি জ্ঞাপক এই মহান বাণীটির জন্য ৮টি শর্ত রয়েছে। সে শর্তগুলো হল:
• ১) ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ এর অর্থ জেনে-বুঝে স্বীকৃতি দেয়া। এর অর্থ বা তাৎপর্য না বুঝে পাঠ করলে কোন লাভ হবে না।
• ২) দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে স্বীকৃতি দেয়া। এতে কোন সন্দেহ ও অস্পষ্টতা রাখা যাবে না।
• ৩) নির্ভেজাল মনে স্বীকৃতি দেয়া। কোন শিরকী ধ্যান-ধারণা নিয়ে পাঠ করলে কোন লাভ নেই।
• ৪) সত্য মনে করে স্বীকৃতি দেয়া। কপটতা থেকে মুক্ত থাকা অপরিহার্য।
• ৫) ভালবাসা সহকারে স্বীকৃতি দেয়া। মনের মধ্যে ঘৃণা বা ক্রোধ জমা রেখে স্বীকৃতি দিলে কোন উপকার হবে না।
• ৬) পূর্ণ আনুগত্যের মন-মানসিকতা নিয়ে স্বীকৃতি দেয়া। পরিত্যাগ করার বা অমান্য করার মানসিকতা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
• ৭) মনেপ্রাণে নিঃশর্ত ভাবে গ্রহণ করা। এ বিষয়ে কোন প্রতিবাদ করা বা প্রশ্ন তোলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
• ৮) আল্লাহ ছাড়া অন্য যত কিছুর ইবাদত করা হচ্ছে সব অস্বীকার করা।
❖ প্রশ্ন: ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয় কয়টি ও কি কি?
উত্তর: ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয় দশটি। যথা:
• ১) ইবাদতে ক্ষেত্রে শিরক করা।
• ২) মুশরিকদেরকে মুশরিক মনে না করা বা তাদের কুফরির ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা কিংবা তাদেরকে সঠিক পথের অনুসারী মনে করা।
• ৩) আল্লাহ তা’আলার নিকট পৌঁছার উদ্দেশ্যে কোন ‘মাধ্যম’ ধরে তার নিকট দুআ করা বা তার নিকট সুপারিশ প্রার্থনা করা অথবা তার উপর পরকালে নাজাত পাওয়ার ভরসা করা।
• ৪) এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শের চেয়ে অন্য কোন ব্যক্তির মতাদর্শ উত্তম বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনিত জীবন ব্যবস্থার চেয়ে অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ শ্রেয়।
• ৫) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশিত কোন বিষয়কে মনে মনে ঘৃণা করা যদিও সে তা পালন করে।
• ৬) দ্বীন-ইসলামের কোন বিষয়কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বা হেয় মনে করা।
• ৭) যাদু করা অথবা যাদু-তাবিজ ইত্যাদির মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার মনের মিলন কিংবা বিচ্ছেদ ঘটানো।
• ৮) মুসলমানদের বিরুদ্ধে অমুসলিমদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা।
• ৯) এ বিশ্বাস করা যে, বিশেষ কিছু ব্যক্তি রয়েছে যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরীয়ত মেনে চলতে বাধ্য নন।
• ১০) ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে চলা, ইসলাম শিক্ষা না করা এবং ইসলাম অনুযায়ী আমল না করা।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◯◍◯
No comments:
Post a Comment