আর শিরকের শাস্তিঃ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সবকিছু শোনেন,সবকিছু দেখেন।”
[সূরা নিসা,আয়াত নং ৫৮]
সূরা আল-বাকারাহ-এর ১৯৫ আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ﴾ [البقرة: ١٩٥]
“এবং তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৫]
*১. “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে কেউ অংশীদারিত্বস্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না এবং এর চেয়ে ছোট পাপে যাকে ইচ্ছা তিঁনি ক্ষমা করবেন। আর যে শিরক করল সে বড় ধরনের অপবাদ ধারণ করল।”
[সুরা নিসা,আয়াত নং ৪৮]
*২. অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে “আর যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করল সে বহু দূরের ভ্রষ্টতায় পতিত হলো।”
[সুরা নিসা,আয়াত নং ১১৬]
*৩. “নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর অংশীস্থাপন করবে,আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নামে। আর এরূপ অত্যাচারীদের জন্যে কোন সাহায্যকারী থাকবে না।”
[সুরা মায়েদা,আয়াত নং ৭২]
*৪. “আর যে আল্লাহর সাথে শিরক করল; সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল, অত:পর মৃতভোজী পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোন দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল।”
[সুরা হজ,আয়াত নং ৩১]
তাই সাবধান হয়ে যান না জেনে বুঝে কাউকে “শিরক” করছে “কবর পুজা” করছে ইত্যাদি বলা থেকে বিরত থাকেন তা না হলে আপনি আল্লাহর শাস্তির অপেক্ষা করেন আপনাকে এই গুনাহর জন্য ও মিথ্যা অপবাদ দেয়ার জন্য কঠোর শাস্তি দেয়া হবেঃ
وَيَدْرَأُ عَنْهَا الْعَذَابَ أَنْ تَشْهَدَ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ بِاللَّهِ إِنَّهُ لَمِنَ الْكَاذِبِينَ
“এবং পঞ্চমবার বলবে যে,যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তবে তার উপর নেমে আসবে আল্লাহর অভিশাপ।”
[সুরা নুর আয়াত নং ৭]
তাছাড়াও সুরা নূরের ১২, ১৩ ও ১৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
لَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنْفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوا هَذَا إِفْكٌ مُبِينٌ (12) لَوْلَا جَاءُوا عَلَيْهِ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَإِذْ لَمْ يَأْتُوا بِالشُّهَدَاءِ فَأُولَئِكَ عِنْدَ اللَّهِ هُمُ الْكَاذِبُونَ (13) وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ لَمَسَّكُمْ فِي مَا أَفَضْتُمْ فِيهِ عَذَابٌ عَظِيمٌ (14)
“তোমরা যখন একথা (অর্থাৎ অপবাদ) শুনলে,তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলেনি যে,এটা তো নির্জলা মিথ্যা অপবাদ?”
[সূরা নূর,আয়াত নং ১২]
“তারা কেন এ ব্যাপারে চার জন সাক্ষী উপস্থিত করেনি;অতঃপর যখন তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি,তখন তারাই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী।”
[সূরা নূর,আয়াত নং ১৩]
“যদি ইহকাল ও পরকালে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত,তবে তোমরা যা চর্চা করছিলে (অর্থাৎ যে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলে),সেজন্য তোমাদেরকে গুরুতর আযাব দেয়া হতো।”
[সূরা নূর,আয়াত নং ১৪]
মাযার ঘিরে আরো যত কাজ করা হয়, তা সবই বিদআত। এসব করা জায়েজ নেই। যেমন-
১-মাযার ঘিরে উরস করা।
২-মাযারে বাতি প্রজ্বলন করা
২-মাযারে মান্নত মানা।
৩-মাযারে গিয়ে দুআ করা। মৃত ব্যক্তির কাছে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করে দেওয়ার আবেদন করা।
৪-মাযারে শিন্নি পাকানো ইত্যাদী সকল কাজই বিদআত ও শরীয়ত গর্হিত কাজ। এসব করা খুবই গোনাহের কাজ। এসবের কোন ভিত্তি ইসলামে নেই। সম্পূর্ণ হারাম এ সকল কাজ।
মাযার ঘিরে উরস করা
স্বীয় কবরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান করাকে নিষিদ্ধ করে আল্লাহর নবী ইরশাদ করেন-
عن أبى هريرة قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « لا تجعلوا بيوتكم قبورا ولا تجعلوا قبرى عيدا وصلوا على فإن صلاتكم تبلغنى حيث كنتم (سنن ابى داود-كتاب المناسك، باب زيارة القبور، رقم الحديث-2044
“তোমরা স্বীয় ঘরকে কবর বানিয়োনা। (অর্থাৎ কবরের ন্যায় ইবাদত-নামায, তেলাওয়াত ও যিকির ইত্যাদি বিহীন করনা।) এবং আমার কবরে উৎসব করোনা।(অর্থাৎ বার্ষিক, মাসিক বা সাপ্তাহিক কোন আসরের আয়োজন করনা। তবে হ্যাঁ আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। নিশ্চয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।(আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতারা পৌঁছিয়ে দেন।)” (সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নং-২০৪৪/৪০)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- রাসূলে সাঃ নিজ রওযা মুবারকে উৎসব (উরস) পালন করতে বারণ করেছেন। তাহলে অন্য কে আর এমন আছে যার কবরে তা বৈধ হবে?
হাদিসের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা মুনাভী রহঃ এই হাদিসের ব্যাক্ষা করতে গিয়ে বলেন-
قال المناوي ويؤخذ منه أن اجتماع العامة في بعض أضرحة الأولياء في يوم أو شهر مخصوص من السنة ويقولون هذا يوم مولد الشيخ ويأكلون ويشربون وربما يرقصون فيه منهي عنه شرعا وعلى ولي الشرع ردعهم على ذلك وإنكاره عليهم وإبطاله (عون المعبود-كتاب المناسك باب زيارة القبور-6/23)
“এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, সাধারণ মানুষ যারা বছরের কোন নির্দিষ্ট মাসে বা দিনে (উরসের নামে) ওলীদের মাযারে একত্রিত হয় এবং বলে-আজ পীর সাহেবের জন্ম বার্ষিকী (মৃত্যু বার্ষিকী), সেখানে তারা পানাহারেরও আয়োজন করে, আবার নাচ গানেরও ব্যবস্থা করে থাকে, এ সবগুলিই শরীয়ত পরিপন্থী ও গর্হিত কাজ। এ সব কাজ প্রশাসনের প্রতিরোধ করা জরুরী। (আউনুল মা’বুদ-৬/২৩)
মাযার ঘিরে বাতি প্রজ্বলন হারাম
عن ابن عباس قال : لعن رسول الله صلى الله عليه و سلم زائرات القبور والمتخذين عليها المساجد والسرج (سنن الترمذى- أبواب الصلاة عن رسول الله صلى الله عليه و سلم ، باب ما جاء في كراهية أن يتخذ على القبر مسجدا-2/136)
“হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর নবী সাঃ অভিশম্পাত করেছেন (বেপর্দা) কবর যিয়ারতকারীনী মহিলাদের উপর, এবং সেসব লোকদের উপর যারা কবরকে মসজিদ বানায়(কবরকে সেজদা করে) এবং সেখানে বাতি প্রজ্জ্বলিত করে। (জামি তিরমীযী-২/১৩৬)
উক্ত হাদিসে সুষ্পষ্ট কবরে বাতি প্রজ্জ্বলনকারীর উপর আল্লাহ তায়ালার অভিশম্পাত করেছেন আল্লাহর নবী সাঃ।
মাযারে মান্নত করা হারাম
আল্লাহ ছাড়া কারো নামে মান্নত বা কুরবানী করা যায়না। কারণ মান্নত ও কুরবানী হচ্ছে ইবাদত। আর ইবাদত আল্লাহ ছাড়া কারা জন্য করা জায়েজ নয়। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (162) لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ (163) (سورة الأنعام-162-163)
“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই। তাঁর কোন অংশিদার নেই। আমি তা-ই করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং প্রথম আনুগত্যশীল। (সূরা আনআম-১৬২-১৬৩)
সূরা কাউসারে মহান রাব্বুর আলামীন বলেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (২)( অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন। (সূরা কাউসার-২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীন পালনের নামে বদ্বীনী কাজ করা থেকে হিফাযত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
মাজারে গিয়ে মাথা নত করা যাবে কিনা?
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
প্রিয় দ্বীনী ভাই,খালেস তাওহিদ প্রতিষ্ঠার লক্ষে ইসলাম-ধর্মে শিরকের পাশাপাশি শিরক প্রবেশের দরজা-জানালাও চিরতরের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একারণে কবর সংক্রান্ত যে সব বিষয় রাসূলুল্লাহ ﷺ শিক্ষা দিয়েছেন (যথা যিয়ারত, সালাম ও দুআ) সেগুলো ছাড়া অন্য কোনো কিছু করার বিন্দুমাত্র অবকাশ ইসলামে নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে কবর-মাজারকে সম্মানসূচক সিজদা করা, গিলাফ চড়ানো, চুমু খাওয়া, তাতে বাতি জ্বালানো, তার সামনে মাথা নোয়ানো-এগুলো বড় গুনাহ ও শিরকী কাজ। এ বিষয়ে কোরআন-হাদিসে অনেক দলীল রয়েছে। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি দলীল রেফারেন্সসহ পেশ করা হল।
১. কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন- وَّ اَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلّٰهِ فَلَا تَدْعُوْا مَعَ اللّٰهِ اَحَدًاۙ
নিশ্চয়ই সিজদার স্থানসমূহের মালিক আল্লাহ তাআলা। অতএব তোমরা তার সাথে কারো ইবাদত করো না। (সূরা জিন ১৮)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে জুবায়ের, আতা,তলক ইবনে হাবীব প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন, উক্ত আয়াতের সিজদার স্থানসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অর্থাৎ এগুলোর মালিক আল্লাহ। অতএব এগুলো দ্বারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সিজদা করো না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৬৭৬; তাফসীরে কুরতুবী ১৯/১৪; তাফসীরে রুহুল মাআনী ২৯/৯১)
২. সহীহ বুখারির হাদিসে এসেছে, রাসূল ﷺ বলেছেন,
لَعَنَ اللَّهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى، اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ
ইহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর লা’নত হোক। কারণ, তারা নিজেদের নাবীগণের কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করেছে। (সহীহ বুখারী ১৩০৭)
৩. সহীহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে,
حَدَّثَنِي جُنْدَبٌ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ قَبْلَ أَنْ يَمُوتَ بِخَمْسٍ، وَهُوَ يَقُولُ: ……أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ، أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ، إِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ
হযরত জুনদুব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ﷺ মৃত্যুর পূর্বে পাঁচটি বিষয় বলেছিলেন, [এর মাঝে]…… বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তী কত উম্মত স্বীয় নবী ও বুজুর্গদের কবরকে সেজদার স্থান বানিয়েছে। সাবধান! তোমরা কবরকে সেজদার স্থান বানিও না। আমি তোমাদের তা হতে বারণ করছি। (সহীহ মুসলিম ৫৩২)
No comments:
Post a Comment