Pages

পাপের শাস্তি দুনিয়াতেই

 যেসব পাপের শাস্তি আল্লাহ দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন।


 পাপের শাস্তি শুধু যে পরকালেই হবে এমন নয়, এমন কিছু পাপ রয়েছে যার প্রায়শ্চিত্ত দুনিয়াতেই মানুষকে ভোগ করতে হয়।


 মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘যে মন্দ কাজ করবে, তাকে সেই কাজের শাস্তি ভোগ করতে হবে।’ সূরা নিসা, আয়াত ১২৩। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ সূরা রুম, আয়াত ৪১। 


 পাপাচারে নিমগ্ন হয়ে যারা আল্লাহর নিষেধাজ্ঞার কথা ভুলে যায় তাদের জন্য আল্লাহ তায়ারার হুঁশিয়ারী- ‘এবং যে আমার জিকির থেকে বিমুখ হবে, তার জীবনযাত্রা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠাব।’ সূরা ত্বহা, আয়াত ১২৪। 


 আল্লাহর সঙ্গে কুফর ও শিরক করাটাও এমন এক মারাত্মক অপরাধ যাতে মানুষের মধ্যে ভয়, ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি কাফিরদের অন্তরে ভীতি ঢুকিয়ে দেব, তারা আল্লাহর সঙ্গে শিরক স্থাপন করেছে।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫১।  


 হাদিসের বর্ণনায়, ‘যখন কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে যে তারা প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত হতে থাকে, তখন তাদের মধ্যে এমন সব দুরারোগ্য ব্যাধির সংক্রমণ হবে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল না।’ ইবনে মাজাহ।


 যখন কোনো জাতির মধ্যে সুদ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে, সেই জাতির ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে। পবিত্র কালামে পাকে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তিনি সুদকে ধ্বংস করে দেন এবং দান-সদকাকে বৃদ্ধি করে দেন।’ সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৬।


  এই ধ্বংস ও পতন হতে পারে বিভিন্নভাবে। যেমন আসমানি-জমিনি বালামুসিবত, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাধ্যমে সুদের অর্থ ও সুদখোর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। মদপান ও জুয়া খেলা উভয়ই শয়তানের কাজ।


  আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা! মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্যনির্ধারক শরগুলো শয়তানের কাজ বৈ কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।’ সূরা মায়েদাহ, আয়াত ৯০।


  অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ, ব্যভিচার, ওজনে কম দেয়া, অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা- এ অপরাধগুলোর শাস্তিও পাপীকে দুনিয়ায় ভোগ করতে হয়।

 রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে আত্মসাৎ-প্রবণতা বেড়ে গেলে সে জাতির অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করা হয়। কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে সেখানে অপমৃত্যুর হার বেড়ে যায়। কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা ওজনে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করা হয়। কোনো জাতির লোকেরা অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করলে তাদের মধ্যে রক্তপাত বিস্তৃতি লাভ করে। কোনো জাতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের ওপর শত্রুদের চাপিয়ে দেন।’ মুয়াত্তা মালিক।


সুদ খাওয়াঃ-

সুদের ৭০ ধরনের গুনাহ রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নতম গুনাহ হলো, স্বীয় মাকে বিবাহ করা। (বায়হাকি, মিশকাত, পৃষ্ঠা : ২৪৬)

 আর সর্বোচ্চ গুনাহ হলো আল্লাহর বিরুদ্ধে জিহাদ করা।

 আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যারা সুদ খায় (বিচার দিবসে) তারা সে ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দিয়েছে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)


ঘুষ খাওয়াঃ- 

ঘুষ আদান-প্রদান করা লানতযোগ্য কাজ।

 মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের প্রতি আল্লাহ তাআলার লানত।’

 (আন-নিহায়া ফি গারিবিল হাদিস, ইবনুল আসির, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা : ২২৬


মদপান ও জুয়া খেলাঃ

- মদপান ও জুয়া খেলা উভয় শয়তানের কাজ।আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা! মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, তাহলেই তোমরা সফলকাম হতে পারবে। (সুরা : আল মায়িদা, আয়াত : ৯০


চুরি করাঃ- 

চুরি করা জঘন্য অপরাধ। চুরি সমাজ থেকে শান্তি বিদূরিত করে দেয়। এর শাস্তি হলো, কবজি পর্যন্ত হাত কেটে দেওয়া।

 যেমন আল্লাহর বাণী—‘পুরুষ চোর ও নারী চোরের অপরাধের শাস্তিস্বরূপ উভয়ের হাত কবজি পর্যন্ত কেটে দাও।’(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩৮)


আত্মসাৎ করাঃ

-আত্মসাৎ করা মারাত্মক গুনাহ ও জঘন্য অপরাধ। মালিক ক্ষমা না করলে এ গুনাহ আদৌ ক্ষমা হবে না। তাকে অবশ্যই জাহান্নামের অনলে জ্বলতে হবে।


 জায়েদ ইবনে খালিদ জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি কোনো দ্রব্য আত্মসাৎ করে। পরে সে মারা গেলে মহানবী (সা.) তার জানাজা পড়াননি। তিনি সাহাবিদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের এ সঙ্গী আল্লাহর পথের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে।

 বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তার জিনিসপত্র তল্লাশি করে তাতে একটি রেশমি বস্ত্র পেলাম, যার মূল্য হবে দুই দিরহাম। (তিরমিজি, মিশকাত, পৃ. ২৪২)


ব্যভিচার করাঃ-

 ব্যভিচারের শাস্তি ভয়াবহ। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘ব্যভিচারের মন্দ পরিণাম ছয়টি। তিনটি দুনিয়ায়, আর তিনটি আখিরাতে।

 দুনিয়ার তিনটি হলোঃ-

 ১. সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া

 ২. দরিদ্রতা

 ৩. অকালমৃত্যু।

 আর আখেরাতের তিনটি হলো :

 ১. আল্লাহর অসন্তুষ্টি

 ২. হিসাব-নিকাশের কঠোরতা ও

 ৩. জাহান্নামের কঠিন শাস্তি।


 (ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ, ই.ফা. পৃ. ১০৯)

 আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। কারণ তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)

 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মানুষ যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেরিয়ে যায় এবং এটি তার মাথার ওপর মেঘখণ্ডের মতো ভাসতে থাকে।

 অতঃপর সে যখন তাওবা করে, তখন ঈমান আবার তার কাছে ফিরে আসে।’ (আবু দাউদ, কিতাবুস সুন্নাহ, হাদিস নম্বর ৪৬৯০)

 তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ব্যভিচার করে বা শরাব পান করে, আল্লাহ তার ওপর থেকে ঈমান ছিনিয়ে নিয়ে যান, যেভাবে মানুষ মাথার দিক দিয়ে জামা খুলে নেয়।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম, ১ : ২২)


হিংসা করাঃ-

হিংসা নেকগুলো ধ্বংস করে দেয়।

 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা হিংসা পুণ্যকে এমনভাবে বিনষ্ট করে দেয়, যেভাবে আগুন কাঠকে ভস্মীভূত করে দেয়। (আবু দাউদ)

 হিংসা থেকে বেঁচে থাকা ফরজ। কারণ তা এমন নীরব অনল, যা ক্রমে জ্বলে ওঠে এবং মানুষের নেকগুলো ধ্বংস করে দেয়।

 অথচ মানুষের কোনো খবরই থাকে না যে তার নেকগুলো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।


ছিনতাই ও ডাকাতিঃ

-ছিনতাই ও ডাকাতি , লুটপাট ইত্যাদি চুরি অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ। কারণ চুরি হয় গোপনে। আর ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট হয় প্রকাশ্যে।

 এদের শাস্তি হলো হত্যা, শূলে চড়ানো, হাত-পা কেটে ফেলা ও দেশ থেকে বহিষ্কার করা।

 মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে লুটপাট করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’(আবু দাউদ, মিশকাত, পৃষ্ঠা : ৩১৩)


প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করাঃ- 

প্রতিশ্রুতি করলে তা পূরণ করা আবশ্যক। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা নিষেধ ও গুনাহে কবিরা।

 আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা অঙ্গীকার পূরণ করো। কেননা প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়ে তোমাদের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৪)

 মহানবী (সা.) বলেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই, তার মধ্যে ঈমান নেই। অনুরূপ যে ব্যক্তি অঙ্গীকার রক্ষা করে না, তার মধ্যে দ্বিন নেই।’(বায়হাকি, মিশকাত, পৃষ্ঠা : ১৫)

 তিনি আরো ইরশাদ করেন,‘মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি :

 ১. কথা বললে মিথ্যা বলে,

 ২. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে,

 ৩. আমানত রাখলে খিয়ানত করে।

 অন্য বর্ণনায় রয়েছে চারটি। চতুর্থটি হলো যখন বিবাদ করে, গালাগাল করে।’(বুখারি, মুসলিম, মিশকাত, ১৭ পৃষ্ঠা)

 অতএব, প্রতীয়মান হলো যে অঙ্গীকার পূরণের সঙ্গে ঈমানের সম্পর্ক আছে। যার ঈমানের ঘাটতি রয়েছে, সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। আর এর ফলে আল্লাহ তাআলা শত্রুদের তাদের ওপর প্রবল করে দেন।


বিচারকার্যে অসততাঃ-

 অন্যায়, দুর্নীতি ও অসততা সর্বদা হারাম ও মারাত্মক অপরাধ। বিচারক সেজে বিচারকার্যে দুর্নীতি করা আরো জঘন্য অপরাধ। বিচারকের জন্য ইনসাফ ও সততা অবলম্বন করা অপরিহার্য।

 মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে শাসক আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার করে না, আল্লাহ তার নামাজ কবুল করেন না।’ (হাকিম)

 তিনি আরো বলেন, ‘এক শ্রেণির বিচারক জান্নাতে যাবে, আর দুই শ্রেণির বিচারক জাহান্নামে যাবে। যে বিচারক জান্নাতে যাবে, সে হলো এমন বিচারক, যে সত্য ও ন্যায়কে যথার্থ উপলব্ধি করে এবং তদনুযায়ী বিচার করে।পক্ষান্তরে যে বিচারক সত্য যথার্থ উপলব্ধি করেও ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যায় রায় দেয়, সে জাহান্নামি। তদ্রূপ যে বিচারক সত্যকে যথার্থ উপলব্ধি না করে স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী রায় দেয়, সে-ও জাহান্নামি।’ (আবু দাউদ)


পরিমাণ ও ওজনে কম দেওয়াঃ

-পরিমাপে ও ওজনে কম দেওয়া নিষেধ। এটি জঘন্যতম খিয়ানত ও গুনাহে কবিরা। এর ফলে আল্লাহ তাআলা ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দেন ও দুর্ভিক্ষ দেন।

 আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়, যারা মানুষের কাছ থেকে ওজন করে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, আর যখন মানুষকে মেপে কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়।’ (সুরা : মুতাফফিফীন, আয়াত : ১-৩)

 মহানবী (সা.) যখন হিজরত করে মদিনায় যান, তখন সেখানে আবু জুহায়লা নামক এক ব্যবসায়ী ছিল। তার দোকানে ছিল দুটি দাঁড়িপাল্লা। একটি দিয়ে সে অন্যের জিনিস মেপে রাখত, আর আরেকটি দিয়ে মানুষকে মাল মেপে দিত। তার প্রসঙ্গে উল্লিখিত আয়াত নাজিল হয়।

 রাসুলুল্লাহ (সা.) একদা পরিমাপকারী ও দাঁড়িপাল্লা দ্বারা ওজনকারী ব্যবসায়ীদের বলেন, ‘তোমাদের ওপর এমন দুটি জিনিসের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে, যে জিনিসদ্বয়ের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার কারণে তোমাদের আগের উম্মত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।’ (তিরমিজি)তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘বিচার দিবসে (অসৎ) ব্যবসায়ীদের হাশর হবে ফাসিক, কাফির ও বদকারী হিসেবে, তবে তাদের মধ্যে যারা মুত্তাকি, পুণ্যবান ও সত্যবাদী, তাদের এমনটি হবে না। (তিরমিজি, মিশকাত, পৃষ্ঠা : ২৪৪)


মজুদদারি ও কালোবাজারিঃ-

 মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশে খাদ্যদ্রব্য মজুদ রাখা এবং কালোবাজারি সম্পূর্ণরূপে হারাম।

 মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য আটকে রাখে (মজুদদারি করে) আল্লাহ তাআলা তার ওপর মহামারি ও দারিদ্র্য চাপিয়ে দেন।’ (ইবনে মাজাহ ও বায়হাকি, মিশকাত, পৃষ্ঠা : ২৫১)











No comments:

Post a Comment

কুরআনের কিছু আয়াত

 কুরআনের কিছু আয়াত এখানে এমন কিছু কুর'আনের আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো আমাদের অন্তরকে শীতল করবে এবং পরকালীন প্রস্তুতি নিতে সাহায্য ক...