Pages

=হালাল-হারাম=

 সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة৩. তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু(১), রক্ত(২), শূকরের গোস্ত(৩), আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা পশু(৪), গলা চিপে মারা যাওয়া জন্তু(৫), প্রহারে মারা যাওয়া জন্তু(৬), উপর থেকে পড়ে মারা যাওয়া জন্তু(৭), অন্যপ্রাণীর শিং এর আঘাতে মারা যাওয়া জন্তু(৮) এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু(৯); তবে যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা ছাড়া(১০), আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলী দেয়া হয় তা(১১) এবং জুয়ার তীর দিয়ে ভাগ নির্ণয় করা(১২), এসব পাপ কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে(১৩); কাজেই তাদেরকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম(১৪), আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম(১৫)। অতঃপর কেউ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة৬২. আর তাদের অনেককেই আপনি দেখবেন পাপে, সীমালঙ্ঘনে ও অবৈধ খাওয়াতে তৎপর(১); তারা যা করে তা কতই না নিকৃষ্ট।

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة৭৬. বলুন, ‘তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদত কর যার কোন ক্ষমতা নেই তোমাদের ক্ষতি বা উপকার করার? আর আল্লাহ তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

সূরা আল-বাকারাহ-এর ১৯৫ আয়াতে বলা হয়েছে,

﴿وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ﴾ [البقرة: ١٩٥]

“এবং তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৫]

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة৯০. হে মুমিনগণ! মদ(১), জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয় করার শর(২) তো কেবল ঘৃণার বস্তু, শয়তানের কাজ। কাজেই তোমরা সেগুলো বর্জন কর-যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।

(৩)সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة(৯০) হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।[1]

সূরাঃ ৭২ আল-জ্বিন  Al-Jinn  سورة الجن২৬. তিনিই গায়েবী বিষয়ের জ্ঞানী, তিনি তাঁর গায়েবের জ্ঞান কারও কাছে প্রকাশ করেন না(১),

১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক সম্প্রদায় হবে যারা যিনা-ব্যভিচার, রেশমী কাপড় ব্যবহার, মদ্যপান ও গান বাদ্যকে হালাল করবে। [বুখারীঃ ৫৫৯০] অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করবে ও তাওবাহ করবে না, সে আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে। [বুখারীঃ ৫৫৭৫]

আল্লাহ তা‘আলা সূরা হুজুরাতের ১২ নং আয়াতে বলেছেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱجۡتَنِبُواْ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلظَّنِّ إِنَّ بَعۡضَ ٱلظَّنِّ إِثۡمٞۖ وَ لَا تَجَسَّسُواْ وَلَا يَغۡتَب بَّعۡضُكُم بَعۡضًاۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمۡ أَن يَأۡكُلَ لَحۡمَ أَخِيهِ مَيۡتٗا فَكَرِهۡتُمُوهُۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ تَوَّابٞ رَّحِيمٞ ١٢﴾ [الحجرات: ١٢]

“হে মুমিনগণ তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোনো কোনো অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إيَّاكُمْ والظَّنَّ فَإنَّ الظَّنَّ أكْذَبُ الْحَدِيثِ ولا تَحَسَّسُوا ولاتَجَسَّسوا ولاتَنَافَسُوا ولا تّحَاسَدُوا ولاتّبَاغَضُوا ولا تَدَابَرُوا وكُونُوا عِبَادَ اللهِ إخْوانًا»

“খবরদার! তোমরা অবশ্যই অনুমান থেকে দূরে থাকবে। কারণ, অনুমাণই হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় জানার চেষ্টা করবে না। গোপন দোষ অনুসন্ধান করবে না, পরস্পর হিংসা করবে না, পরস্পরে বিদ্বেষে লিপ্ত হবে না এবং পরস্পরে শত্রুতা ও সম্পর্কচ্ছেদ করবে না। তোমরা পরস্পরে আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।”[33]

এভাবে আমরা জানতে পারছি যে, অনুমানে কথা বলা এবং অন্যের দোষ অনুসন্ধান করা হারাম। শুধু তাই নয়, অনুসন্ধান ছাড়াও যদি অন্যের কোনো দোষত্রুটি মানুষ জানতে পারে তা তার অনুপস্থিতিতে উল্লেখ করা গীবত ও হারাম। 

সূরাঃ ৬/ আল-আন'আম | Al-An'am | سورة الأنعام ৫৯. আর(১) গায়েবের চাবি(২) তাঁরই কাছে রয়েছে(৩), তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারসমূহে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত রয়েছেন, তাঁর অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।

কুরআনের পরিভাষায় গায়েবের জ্ঞান ও অসীম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা'আলার। উদাহারণতঃ কে কখন কোথায় জন্মগ্রহণ করবে, কি কি কাজ করবে, কতটুকু বয়স পাবে, কতবার শ্বাস গ্রহণ করবে, কতবার পা ফেলবে, কোথায় মৃত্যুবরণ করবে, কোথায় সমাধিস্থ হবে এবং কে কতটুকু রিযক পাবে, কখন পাবে, বৃষ্টি কখন, কোথায়, কি পরিমাণ হবে, অনুরূপভাবে স্ত্রী লোকের গর্ভাশয়ে যে ভ্রূণ অস্তিত্ব লাভ করেছে, কিন্তু কারো জানা নেই যে, পুত্র না কন্যা, সুশ্রী না কুশ্রী, সৎস্বভাব না বদম্বভাব ইত্যাদি বিষয়সমূহ যা সৃষ্ট জীবের জ্ঞান ও দৃষ্টি সীমা থেকে উহ্য রয়েছে। সুতরাং (وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ) এর অর্থ এই দাঁড়ালো যে, গায়েবী বিষয়ের ভাণ্ডার আল্লাহরই কাছে রয়েছে। কাছে থাকার অর্থ করায়ত্ত ও মালিকানায় থাকা। উদ্দেশ্য এই যে, গায়েবী বিষয়ের ভাণ্ডারসমূহের জ্ঞান তার করায়ত্ত এবং সেগুলোকে অস্তিত্ব দান করা অর্থাৎ কখন কতটুকু অস্তিত্ব লাভ করবে- তাও তার সামর্থ্যের অন্তর্গত। কুরআনুল কারীমের অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ “প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার আমার কাছেই রয়েছে। কিন্তু আমি প্রত্যেক বস্তু একটি বিশেষ পরিমাণে নাযিল করি।” [সূরা আল-হিজর: ২১]

হালাল শব্দের আভিধানিক অর্থ সিদ্ধ। আর শরীয়তের ভাষায় যা করার অনুমতি দিয়েছে বা করতে নিষেধ করেনি এমন বস্তু বা কাজকে হালাল বলে। হারাম শব্দের আবিধানিক অর্থ নিষিদ্ধ। আর শরীয়তের ভাষায় যা স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন, যা করার পরিণামে পরকালে শাস্তি অনিবার্য এরূপ বস্তু ও কাজকে হারাম রূপে আখ্যায়িত করা হয়।

হালাল ও হারাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন : ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা হালাল ও পবিত্র বস্তুর মধ্য হতে ভক্ষণ কর! আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (বাকারা ১৬৮)

‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যেসব পবিত্র বস্তু জীবিকারূপে দান করেছি, তা হতে ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা একান্তভাবে তাঁরই ইবাদত কর।’ (বাকারা ১৭২)

‘এখন তোমরা যদি আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি ঈমানদার হয়ে থাক তাহলে যেসব জন্তুর ওপর (যবেহ করার সময়) আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে সেসবের গোশত খাও।’ (আনয়াম ১১৮)

‘আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে যে জিনিসের ওপর তা তোমরা খাবেনা তার কি কারণ থাকতে পারে? অথচ নিতান্ত ঠেকার সময় ছাড়া অন্য সর্বাবস্থায় সেসব জিনিসের ব্যবহার আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন, তা তিনি তোমাদেরকে বিস্তারিত করে বলে দিয়েছেন।’ (আনয়াম ১১৯)

‘তিনি তো তোমাদের উপর মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো নামে যবেহকৃত প্রাণী হারাম করেছেন। অবশ্য যে ব্যক্তি অন্যোপায় হয়েছে সে সীমালংঘনকারী বা অভ্যস্ত নয়, তবে তার জন্য তা ভক্ষণে গুণাহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াবান।’ (বাকারা ১৭৩)

‘হে নবী! তুমি কেন সেই জিনিস হারাম কর যা আল্লাহ তোমার জন্য হালাল করেছেন? (তা কি এই জন্য যে) তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তোষ পেতে চাও? আল্লাহ ক্ষমাকারী, অনুগ্রহকারী।’ (তাহরীম ১)

‘হে নবী! তাদের বল, আমার আল্লাহ যেসব জিনিস হারাম করেছেন তাতো এই নির্লজ্জতার কাজ প্রকাশ্য বা গোপনীয় এবং গুণাহের কাজ ও সত্যের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি।’ (আরাফ ৩৩)

হালাল ও হারাম সম্পর্কে হাদীস : হযরত মিকদাম ইবনে মায়াদী কারাব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, মানুষের খাদ্যের মধ্যে সেই খাদ্যই সবচেয়ে উত্তম, যে খাদ্যের ব্যবস্থা সে নিজ হস্ত উপার্জিত সম্পদ দ্বারা করে। আর আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত দাউদ (আ.) আপন হাতের কামাই হতে খাদ্য গ্রহণ করতেন। (বুখারী)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, হারাম পথে সম্পদ উপার্জন করে বান্দা যদি তা দান করে দেয় আল্লাহ সে দান গ্রহণ করেন না। প্রয়োজন পূরণের জন্যে সে সম্পদ ব্যয় করলেও তাতে কোন বরকত হয় না। সে ব্যক্তি যদি সে সম্পদ রেখে ইন্তেকাল করে তা জাহান্নামের সফরে তার পাথেয় হবে। আল্লাহ অন্যায় দিয়ে অন্যায়কে মিটান না। বরং তিনি নেক কাজ দিয়ে অন্যায়কে মিটিয়ে থাকেন। নিশ্চয়ই মন্দ মন্দকে দূর করতে পারে না। (মিশকাত)

উমার ইবনে আউফ মুযানী নবী করীম (সা.) হতে শুনে বর্ণনা করেন মুসলমানরা পরস্পরের মধ্যে চুক্তি ও অঙ্গীকার করতে পারে। তবে এমন চুক্তি ও অঙ্গীকার জায়েজ নেই যা হালালকে হারাম করে দেয় এবং হারামকে দেয় হালাল। মুসলমানরা তাদের শর্তাবলী পালন করবে। তবে এমন কোন শর্ত মানা যাবে না যা হারামকে হালাল করে দেয় আর হালালকে করে দেয় হারাম। (তিরমিযি)


ইসলামি শরিয়াতে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে হালাল ও হারাম। পৃথিবীর সকল আসমানি গ্রন্থেই এই বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। 

হালাল-হারাম নির্ধারণ করার অধিকার শুধুমাত্র মহান আল্লাহরই আছে সুতরাং জীবনে হালাল-হারামের বিধান অনুসারে চলে জীবন পরিচালনা করাই হচ্ছে ইবাদত। 

মহান আল্লাহ তায়ালা ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআনে বলছেন যে-

‘সে সমস্ত লোক যারা রাসূল (সা.) এর আনুগত্য করে, যিনি উম্মী নবী, যার সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে থাকা তাওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে সৎকর্মের নির্দেশ দেন, অসৎকর্ম থেকে বারণ করেন; যাবতীয় পবিত্র বস্তু তাদের জন্য হালাল ঘোষনা করেন ও হারাম বস্তুসমূহকে করেন নিষিদ্ধ এবং তাদের ওপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের ওপর বিদ্যমান ছিল। সুতরাং যেসব লোক তার ওপর ঈমান এনেছে, তার সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাকে সাহায্য করেছে এবং সেই নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সঙ্গে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। (সূরা আরাফ ৭, আয়াত-১৫৭)

হালাল:

হালাল শব্দের অর্থ হচ্ছে বৈধ, উপকারী ও কল্যানকর বস্তু ও কাজসমূহ। যা কিছু মানুষের জন্য উপকারী ও কল্যানকর ওই সকল কাজ ও বস্তুকে মহান আল্লাহ পাক মানুষের জন্য হালাল করে দিয়েছেন। যেমন: নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পর্দা করা, গরুর গোশত ইত্যাদি। অর্থাৎ পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর ওপর ভিত্তি করে যে সব বিষয়কে ইসলামে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, ইসলামি পরিভাষায় সেটাই হালাল। একজন মুমিন মুসলিমের উচিত সর্বদা হালাল বা বৈধ পথ ও পদ্ধতি অবলম্বন করা।

হালাল বিষয়ের ফজিলত:

মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাত করার জন্য। বান্দার করা সকল ইবাদাতের মধ্যে হালাল উপার্জন ও হালাল পথ অবলম্বন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার কল্যাণের জন্য যে পথের কথা বলেছেন সেই পথ অনুসরণ করা ইবাদতের অংশ। জীবনে হালাল বিধান প্রতিফলনের ফজিলত অনেক।

নিম্নে আলোচনা করা হলো:

(১) জীবনে হালাল পথ অবলম্বন একজন মুসলিমের জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেয়। কারণ হাশরের ময়দানে প্রত্যেক মুসলিমকে যে- ৫টি প্রশ্ন করা হবে যার সঠিক উত্তর ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা সেগুলো সঠিক উত্তর তারাই দিতে পারবে যারা ইহজীবনে হালাল পথ অবলম্বন করেছে এবং জীবনে তার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। 

(২) হালাল পথ অবলম্বন করে সম্পদ উপার্জন মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। 

(৩) কেয়ামতের দিন পুরস্কার হিসেবে জান্নাত লাভ, 

(৪) হালাল উপার্জন ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত, 

(৫) হালাল পথ অবলম্বন করা মহান আল্লাহর ইবাদত করার শামিল, 

(৬) পৃথিবীতে অগাধ সম্মানের অধিকারী হওয়া, 

(৭) মহান আল্লাহর রহমত প্রাপ্তি,

(৮) মানসিক প্রশান্তি লাভ ও মানবিক সকল গুনাবলী অর্জন করা, ইত্যাদি। 
জীবনে হালাল পথ অবলম্বন করলে ইহজাগতিক ও পরজাগতিক উভয় জগতে প্রশান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করা যায়।
 
হারাম:

হারাম শব্দের অর্থ হচ্ছে ক্ষতিকর, অবৈধ, অকল্যানকর কাজ ও বস্তুসমূহ। যে সমস্ত কাজ বা বস্তু মানুষের জন্য অপকারী বা ক্ষতিকর তার সব কিছুই ইসলামে মহান আল্লাহ পাক হারাম করেছেন। যেমন : শুকরের গোশত, ঘুষ, সুদ, বেপর্দা এবং সকল পাপ কর্ম ইত্যাদি। অর্থাৎ, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর ওপর ভিত্তি করে যে সকল বিষয়কে ইসলামে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, ইসলামি পরিভাষায় সেটাই হারাম। মহান আল্লাহ পাক হারাম কাজের কঠিন শাস্তি নির্ধারিত করে রেখেছেন তাই সকল হারাম কাজ বর্জনীয়।

হারামের কুফল:

হারাম সম্পর্কে জানা না থাকলে জীবন পরিপূর্ণ হালাল করা সম্ভব না; তাই প্রথমেই হারাম বিষয়গুলো ও তার কুফল সম্পর্কে জানা দরকার। হারাম পথ মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়: পদ্ধতিগত ও বস্তুগত। জীবনে কিছু অর্জনের জন্য যেকোনো হারাম পথ অবলম্বন করাটাই হচ্ছে পদ্ধতিগত হারাম। আবার, যে বস্তু পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক নিষিদ্ধ সেই বস্তু ব্যবহার বা ভক্ষন বা পান হচ্ছে বস্তুগত হারাম। 

মানবজীবনে হারাম পথ ও বস্তু অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। শুধু ইহজাগতিক নয় বরং পরজাগতিক জীবনের জন্যেও ক্ষতিকর। নিম্নে কিছু বিষয় আলোচনা করা হলো:

(১) হারাম বস্তুর আহারের ফলে ইবাদত কবুল হয়না, 

(২) হারাম বস্তু মহান আল্লাহর তরফ থেকে নিষিদ্ধ তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন হারাম পথ অবলম্বনকারীরা জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, 

(৩) হারাম পথ অবলম্বন সামাজিক অসম্মানের কারণ, 

(৪) অতিরিক্ত লোভের কারণে হারাম পথ,

(৫) হারাম পথে চলার কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, 

(৬) মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, ইত্যাদি।
 
হারাম আমাদের জন্য ক্ষতিকর। যা আমাদের ঈমান আমলের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে যা আমার আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে তা অবশ্যই বর্জনীয়।
 
ইসলাম একটি পুর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ও শান্তির ধর্ম। ইসলামের প্রতিটি বাণী বান্দার কল্যাণ ও সুন্দর জীবন গঠনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। ইসলামের মূল গঠনতন্ত্র হচ্ছে পবিত্র কোরআন ও নবীর সুন্নাহ। 

মহান আল্লাহর আদেশ ও নবীর দেখানো পথে যাত্রা করাই প্রতিটি মুসলমানের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর বিপরীত কারো জন্যেই মঙ্গলজনক নয়। মানুষের কল্যাণের জন্যই ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় হারাম ও হালাল বিধানগুলোর এত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। 
 
হালাল ও হারাম বিধানের মূখ্য উদ্দেশ্য বিশ্বমানবতার কল্যাণ সাধন এবং অকল্যাণ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করা। 

হারাম বিধানগুলো কখনোই মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনা। নষ্ট করে দেয় বান্দার অন্তর আত্মাকে এবং বিবেক বুদ্ধিও লোপ করে বানিয়ে দেয় গুনাহগার।

পক্ষান্তরে হালাল বিধানগুলো মানুষের জীবনকে করে তোলে সুন্দর ও সুশোভিত। হালাল বিধান পালনেই রয়েছে বান্দার আত্মার কল্যাণ, দেহের কল্যাণ এবং বিবেক-বুদ্ধির সুস্থতা। এতে মহান আল্লাহ বান্দার প্রতি নাজিল করেন রহমত ও বরকত। আর তাই আমাদের সকলের উচিত ইসলামের বিধান সমূহের যথার্থ পালন এবং গুরুত্ব প্রদান করা।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলিম উম্মাহকে হালাল ও হারাম- এ দুইটি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

আবুবকর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে দেহ হারাম দ্বারা প্রতিপালিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমান, মিশকাত হা/২৭৮৭)।

৩৯

عَنْ أَبِيْ مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم نَهَى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَمَهْرِ الْبَغِيِّ وَحُلْوَانِ الْكَاهِنِ.

আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘কুকুরের মূল্য, যিনাকারীনীর উপার্জন ও গণকের উপার্জন খেতে নিষেধ করেছেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬৪)।

No comments:

Post a Comment

কুরআনের কিছু আয়াত

 কুরআনের কিছু আয়াত এখানে এমন কিছু কুর'আনের আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো আমাদের অন্তরকে শীতল করবে এবং পরকালীন প্রস্তুতি নিতে সাহায্য ক...