Pages

Tuesday, October 19, 2021

একজন মুসলিম হিসেবে মৃত্যু আসার আগেই আপনার পরিবারকে যে সমস্ত বিষয়ে ওসিয়ত করে যাবেন,,,,

 একজন মুসলিম হিসেবে মৃত্যু আসার আগেই আপনার পরিবারকে যে সমস্ত বিষয়ে ওসিয়ত করে যাবেন,,,,

• মসজিদের মাইকে আমার মৃত্যুর খবর বলবেন না।
• আমার মৃত্যুর সংবাদ শুনলে পড়ুন "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন"।
• আমার মৃত্যুকে অকাল মৃত্যু বলবেন না, কারণ আমি আমার নির্ধারিত রিযিক ভোগ করে ফেলেছি।
• আমাকে নিয়ে বিলাপ-মাতম করবেন না কারণ এটা সুন্নাহ বিরোধী কাজ।
• আমার মৃত্যুতে চল্লিশা, কুল-খানি করবেন না কারণ এটা স্পষ্ট বিদ'আত।
• যারা আমার মৃত্যুর খবর শুনবেন বা যারা আমার মৃত্যুর সময় থাকবেন তারা অবশ্যই আমার জানাজায় অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করবেন।
• আমার লাশকে সুন্দরভাবে গোসল করার ব্যবস্থা করে দিবেন।
• লাশ দাফনে ইসলামিক রীতিনীতি অবলম্বন করবেন.... সমাজের নয়।
• আমাকে কবরস্থ করার পর কিছুক্ষণ সেখানেই থাকুন আর পড়ুন আল্লাহুম্মা সাব্বিতহু আল্লাহুম্মা সাব্বিতহু।
• আমার কবরের আজাব লাঘবের জন্য ও মুনকার নাকিরের প্রশ্নের উত্তর যেন দিতে পারি সেই দোয়া করবেন আল্লাহুম্মা সাব্বিত হু আলাল ইমান।
• আমার হয়ে দান-সাদাকা করবেন।এতে আমার জন্য কল্যাণ হবে। দান- সাদকা বেশি বেশি করলে আল্লাহ খুশি হন।
• আমার সাদাকায়ে জারিয়া চালু থাকলে সেটার খবর নিয়েন,, সে গুলোকে সমুন্নত করার চেষ্টা করবেন।
• আমার পরিবারের খবর নিয়েন।
• আমার মৃত্যু থেকে এই শিক্ষা নিয়ে ফিরে যাবেন... আপনার সময়ও অতি নিকটে।
• আমার পাওনা আমার পরিবার কে ফিরিয়ে দিবেন, না পারলে সাদকাহ জারিয়া করবেন আমার জন্য, তাও না পারলে আজিবন আমার জন্য দুয়া করবেন আমি ক্ষমা করে দিব ইন শা আল্লাহ।
আপনি আমার কাছে পেয়ে থাকলে আমার জীবিত অবস্থায়ই চেয়ে নিবেন আমার কাছে, আর যদি মরে যাই পরিবারের কাছে চাবেন। তারা না দিলে ক্ষমা করে দিবেন আল্লাহর জন্য আল্লাহ ও আপনাকে ক্ষমা করবেন।
اللهم إني أسألك حسن الخاتمة مع كلمة التوحيد موتا شهيدا وأدخلني الجنة الفردوس الاعلي بلا حساب ولاعذاب يا رب العالمين.
আল্লাহ তোমার কাছে কালিমা নসিব করে উত্তম শহীদী মরন চাই। কোন প্রকার আযাব হিসাব ছাড়া জান্নাতুল ফেরদৌসের প্রবেশ করতে দিও হে পৃথিবীর মালিক। আমীন।

Wednesday, June 9, 2021

🌹👇সালাত আদায় করার পদ্ধতি👇🌹

 

🌹👇সালাত আদায় করার পদ্ধতি👇🌹
দলিলসহ দেওয়া আছে,,, আপনার ইচ্ছা হলে মানবেন আর না হলে নাই । কারন আপনার জবাব আপনি দিবেন আর আমার জবাব আমি দিবো।
সংক্ষেপে তাকবীর থেকে সালাম পর্যন্ত:
রাসুল (সঃ) বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছো, ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় করো। / বোখারী, মিসকাত হাঃ ৬৮৩/
১. সালাতের শুরুতে মুখে নিয়ত (নাওয়াইতুয়ান...) বলা বিদআত। মনে মনে নিয়ত করতে হবে
(বুখারী-১ মিশকাত-১)
***জায়নামাজে দাঁড়িয়ে "ইন্নি ওয়াজ্জাহতু...পড়া বিদআত। (তবে সানা হিসেবে নিয়ত বাধাঁর পর পড়া যাবে) (মুসলিম, সহীহ ৭৭১,
২.ক্বিবলামুখী হয়ে "আল্লাহু আকবার'' বলে দুই হাত কাঁধ বা কান বরাবর উঠাবে (কিন্তু কান স্পর্শ করবে না)(বুখারী ৭৩৫ মিশকাত ৭৯০,৭৯৩ আবু দাউদ ৭২৬)
৩.বাম হাতের উপর ডান হাত বুকের উপর রাখবে (আবু দাউদ ৭৫৯ বুখারী ৭৪০)
৪.জামাতের সাথে সালাত আদায় করলে কাতারের মাঝে পরস্পরের পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে। (দুইজন মুছল্লীর মাঝে ফাঁক রাখা সুন্নাত বিরুধী) (বুখারী ৭২৫ মিশকাত ১১০২)
৫.সিজদার স্থান বা তার কাছাকাছি সীমার মধ্যে দৃষ্টি রাখবে।( বাইহাকি, হাকেম ১৭৬১)
-
৬.ছানা পাঠ করবে "আল্লাহুম্মা বাইদ বায়নী"
(বুখারী ৭৪৪)
অথবা "সুবাহানাকাল্লাহুম্মা" (মুসলিম) আবূদাঊদ, সুনান ৭৭৬, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৮০৬, ত্বাহাবী ১/১১৭, দারাক্বুত্বনী, সুনান ১১৩,
অথবা "ইন্নি ওয়াজ্জাহতু" (মুসলিম, সহীহ ৭৭১,/
৭..ক))আঊযুবিল্লাহ -বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করবে (বুখারী ৭৫৬ ইবনে মাজাহ ৮৪৩ মুসলিম ৯০৪ মিশকাত ৮২৩)
খ)).পরের রাক'আত গুলোতে বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।
(মুসলিম, সহীহ ৫৯৯ নং, আহমাদ, মুসনাদ) শুরুতে ‘আঊযু বিল্লাহ্‌---’ও পড়া যায়। না পড়লেও ধর্তব্য নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/১৯৬)
গ))মুছল্লী একাকী হলে বা যোহর ও আছর সালাতে ইমামের পিছনে প্রথম দুই রাক'আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা বা কিছু আয়াত পাঠ করবে।পরের দুই রাক'আতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।
বুখারী ও মুসলিম। /ইবনে মাজাহ ৮৪৩/
৮. সূরা ফাতিহা শেষে আমিন বলবে।ইমামের পিছনে জেহরী সালাতে সূরা ফাতিহা শেষে উচ্চস্বরে আমিন বলবে (আবু দাউদ ৯৩২,৯৩৩ তিরমিযী ২৪৮ ইবনে মাজাহ ৮৫৬ বুখারী ৭৮০)
-
৯.ক্বিরা'আত শেষে "আল্লাহু আকবার" বলে দুই হাত কাঁধ বা কান পর্যন্ত উঠিয়ে (রাফউল ইয়াদায়েন করে) রুকুতে যাবে।(বুখারী ৭৩৫-৭৩৯)
-
১০.দুই হাত দ্বারা দুই হাঁটু শক্ত করে ধরে ভর দিয়ে পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে। হাঁটুসহ দুই পা ও সোজা রাখবে। হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁকা রাখবে।(বুখারী ৮২৮ মিশকাত ৭৯১,২)
-
১১.অত:পর কমপক্ষে ৩ বার সুবহানা রব্বিয়াল আযীম পড়বে। আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারাকুতনী, বাযযার, ইবনু খুযাইমাহ (৬০৪)
(মিশকাত ৮৮১)
-
১২.রুকু থেকে উঠার সময় "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলবে।(বুখারী ৭৯৫)
-
১৩.অত:পর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে প্রশান্তির সাথে দাঁড়াবে এবং কাঁধ বা কান বরাবর দুই হাত উঠিয়ে "রাফউল ইয়াদায়েন " করবে।(বুখারী ৭৩৫-৭৩৯)
-
১৪.তারপর বলবে "রব্বানা লাকাল হামদ"(বুখারী ৭৩৩) অথবা "রব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাছীরান ত্বাইয়িবাম মুবারাকা ফীহি (মিশকাত ৮৭৭)
-
১৫.রাসূল (সা:) রুকু থেকে উঠে এমনভাবে দাঁড়াতেন যে মেরুদন্ডের হাড় যথাস্থানে ফিরে আসত।(বুখারী ৮০০-৮২৮) আবু দাউদ, 'ছহীহ আবু দাউদ (৭২২)। الفقار যবর দ্বারা এর অর্থ মেরুদণ্ডের হাড় যা ঘাড় থেকে নিয়ে পশুর লেজের সূচনাস্থল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ‘কামূস’ ও ফাতহুল বারী দ্রষ্টব্য। (২/৩০৮
-
১৬.রাসূল (সা:) এর রুকু, সিজদা,রুকু থেকে মাথা উঠানো,দুই সিজদাহের মধ্যবর্তী সময় প্রায় সমান হত।(বুখারী ৮০১)
-
১৭.তারপর আল্লাহু আকবার বলে প্রথমে দুই হাত ও পরে দুই হাঁটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে (মিশকাত ৮৯৯ আবু দাউদ ৮৪০)
-
১৮.হাত দুইটি ক্বিবলামুখী করে হাতের উপর ভর দিয়ে
মাথার দুই পাশে কাঁধ বরাবর রাখবে। হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখবে।
আবু দাউদ, হাকিম, তিনি একে ছহীহ বলেছেন ও যাহাবী তাতে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। [5] ইবনু খুযাইমাহ, বাইহাকী, হাকিম একে ছহীহ বলেছেন ও যাহাবী তাতে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। [6] ছহীহ সনদে বাইহাকী, ইবনু আবী শাইবা (১/৮২/২) ও সাররাজ, অন্য সূত্রে তাওজীহুল আছাবি' গ্রন্থে। [7] আবু দাউদ, তিরমিযী এবং তিনি ও ইবনুল মুলাকিন একে ছহীহ বলেছেন (২৭/২) এটি “আল ইরওয়া’ উদ্ধৃত হয়েছে। (৩০৯) [8] আবু দাউদ ও নাসাঈ ছহীহ সনদে।
(বুলগুল মারাম ২৯৭)
-
১৯.কনুই উঁচু রাখবে ও বগল ফাঁকা রাখবে (বুখারী ৮০৭) আবু দাউদ। বুখারী ও মুসলিম, এটি 'আল ইরওয়াতে' (৩৫৯) উদ্ধৃত হয়েছে। এখানে মূল হাদীছে البهمة শব্দ রয়েছে যা البهم শব্দের একবচন, এর অর্থ হচ্ছে বকরীর বাচ্চা। [মুসলিম, আবু উওয়ানাহ ও ইবনু হিব্বান। মুসলিম ও আবু উওয়ানাহ।
-
২০.সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সোজা থাকবে। যেন নীচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে।(মিশকাত ৮৯০)
-
২১.দুই পা খাড়া করে এক সাথে মিলিয়ে রাখবে (মিশকাত ৮৯৩) এ সময় আঙ্গুলগুলো ক্বিবলামুখী করে রাখবে (বুখারী ৮২৭)
-
২২.কমপক্ষে ৩ বার "সুবহানা রব্বিয়াল আলা" বলবে অথবা ৩ বারের বেশি বলবে।
(ইবনু মাজাহ ৮৮৮)আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, দারাকুতনী, ত্বাহাবী, বাযযার, ত্বাবরানী, “আল কাবীর” গ্রন্থে সাতজন ছাহাবী থেকে। রুকুর যিকর (পৃষ্ঠা- ১১৫-১১৬) এর টীকা দ্রষ্টব্য। প্রাগুক্ত।
২৩.সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে। /আবু দাউদ ৭৩০/বুখারী, মুসলিম, সহীহ ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩১৬নং)
এবং ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় প্রশান্তির সাথে বসবে।
বুখারী ৮২৮, বায়হাকী, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৫১পৃ:) আর এই পায়ের আঙ্গুল গুলোকে কেবলামুখী করে রাখতেন। (সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১১০৯ নং)
২৪. দুই সিজদাহের মাঝখানে বলবে "রব্বিগফিরলী,রব্বিগফিরলী(মিশকাত ৯০১) অথবা "আল্লাহুম্মা গফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়াজবুরনী, ওয়াদিনী, ওয়াআফিনী, ওয়ারযুক্বনী" (মিশকাত ৯০০ তিরমিযী ২৮৪)
-
২৫.তারপর "আল্লাহু আকবার" বলে ২য় সিজদায় যাবে ও দু'আ পড়বে। আবূদাঊদ, সুনান ৮৫৭ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইবনু মাজাহ ৮৮৮
২য় ও ৪

Sunday, June 6, 2021

মসজিদে ঢুকে অনেকেই দুই রাকাত ছালাত না পড়ে বসে পড়ে, এটা কি সুন্নাহ বিরোধী?

 মসজিদে ঢুকে অনেকেই দুই রাকাত ছালাত না পড়ে বসে পড়ে, এটা কি সুন্নাহ বিরোধী?

আলোচকঃ ডক্টর আবুল কালাম আজাদ বাশার
তাহিয়্যাতুল মাসজিদ নামায
তাহিয়্যাতুল মাসজিদ বা মসজিদ সেলামীর নামায (২ রাক্‌আত) মসজিদ প্রবেশ করার পর বসার পূর্বেই পড়তে হয়। এর জন্য কোন সময়-অসময় নেই। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন বসার পূর্বে ২ রাক্‌আত নামায পড়ে নেয়।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “সে যেন ২ রাক্‌আত নামায পড়ার পূর্বে না বসে।” (বুখারী, মুসলিম, সহীহ প্রমুখ ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৪৬৭নং)
এই দুই রাকআত নামায বড় গুরুত্বপূর্ণ। তাই তো জুমআর দিনে খুতবা চলাকালীন সময়েও মসজিদে এলে হাল্কা করে তা পড়ে নিতে হয়। (মুসলিম, মিশকাত ১৪১১নং)
আযান চলাকালে মসজিদ প্রবেশ করলে না বসে আযানের জওয়াব দিয়ে শেষ করে তারপর ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ পড়তে হবে। তবে জুমআর দিন খুতবার আযান হলে জওয়াব না দিয়ে ঐ ২ রাকআত নামায আযান চলা অবস্থায় পড়ে নিতে হবে। যেহেতু খুতবা শোনা আরো জরুরী। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৩৫)
মসজিদে প্রবেশ করে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পড়তে হলে ঐ নামায আর পড়তে হয় না। কারণ, তখন এই সুন্নতই ওর স্থলাভিষিক্ত ও যথেষ্ট হয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৫/৬৭, লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উসাইমীন ৫৩/৬৯)
যেমন হারামের মসজিদে প্রবেশ করে (বিশেষ করে মুহ্‌রিমের জন্য) ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ হল তওয়াফ; ২ রাকআত সুন্নত নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ৬/২৬৪-২৬৫)
গ্রন্থঃ স্বালাতে মুবাশশির

Tuesday, June 1, 2021

সঠিক পথ

 

সঠিক পথ

 যদি আপনার মধ্য যদি ১% ও বিবেক বুদ্ধি আর মনুষ্যত্ব সুশিক্ষা আর ভয়-সামান্য পরিমাণও জ্ঞান থাকে তাহলে একটু ভেবে দেখবেন।নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছুর হিসেব গ্রহণকারী= আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়=আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়=আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু=নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসভঙ্গকারী পাপীকে পছন্দ করেন না=এদেরই আশ্রয়স্থল জাহান্নাম=

Surah Baqarah-৩৯. আর যারা কুফরী করেছে এবং আমাদের আয়াতসমূহে(১) মিথ্যারোপ করেছে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।(২)

সূরাঃ ২/ আল-বাকারা | Al-Baqara | سورة البقرة=এটা(১) সে কিতাব; যাতে কোন সন্দেহ নেই(২), মুত্তাকীদের জন্য(৩) হেদায়াত,


Surah Baqarah-৩৯. আর যারা কুফরী করেছে এবং আমাদের আয়াতসমূহে(১) মিথ্যারোপ করেছে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।(২)

সূরাঃ ৪/ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء১১৫. আর কারো নিকট সৎ পথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে আমরা ফিরিয়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করাব, আর তা কতই না মন্দ আবাস!(১)

সূরাঃ ৪/ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء৮২. তবে কি তারা কুরআনকে গভীরভাবে অনুধাবন করে না? যদি তা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট হতে আসত, তবে তারা এতে অনেক অসঙ্গতি পেত।(১)

সূরাঃ ৪/ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء৮৭. আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোন প্রকৃত ইলাহ নেই; অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই(১) আর আল্লাহ্‌র চেয়ে বেশী সত্যবাদী কে?(২)সূরাঃ ৬/ আল-আন'আম | Al-An'am | سورة الأنعام

৩. আর আসমানসমূহ ও যমীনে তিনিই আল্লাহ(১), তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু তিনি জানেন এবং তোমরা যা অর্জন কর তাও তিনি জানেন।(২)

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة১৫.অবশ্যই আল্লাহর নিকট থেকে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের কাছে এসেছে।(২)

সূরাঃ ৬/ আল-আন'আম | Al-An'am | سورة الأنعام ৩২. আর দুনিয়ার জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখেরাতের আবাসই উত্তম; অতএব, তোমরা কি অনুধাবন কর না?

আপনার যতরকম সমস্য আছে এটা  তোমাদের অবশ্যই পরিক্ষা । 

Surah Baqarah ১৫৫. আর আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই পরিক্ষা করব(১) কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদেরকে।

সূরাঃ ৬/ আল-আন'আম | Al-An'am | سورة الأنعام ৩৯. আর যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে, তারা বধির ও বোবা, অন্ধকারে রয়েছে।(১)। যাকে ইচ্ছে আল্লাহ বিপথগামী করেন এবং যাকে ইচ্ছে তিনি সরল পথে স্থাপন করেন।

তোমরা সাহায্য চাও

Surah Baqarah ১৫৩. হে ঈমানদারগণ! তোমরা সাহায্য চাও সবর(১) ও সালাতের মাধ্যমে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সবরকারীদের সাথে আছেন।(২)

Surah Baqarah ৮৬. তারাই সে লোক, যারা আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন ক্রয় করে; কাজেই তাদের শাস্তি কিছুমাত্র কমানো হবে না এবং তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।

সূরাঃ ৪/ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء১১১. আর কেউ পাপ কাজ করলে সে ওটা তার নিজের ক্ষতির জন্যই করে আর আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

Surah Baqarah ৭৭. তারা কি জানে না যে, তারা যা গোপন রাখে এবং যা ব্যক্ত করে, নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন?

সূরাঃ ৩/ আলে-ইমরান | Al-i-Imran | سورة آل عمران ৮৯. কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা এর পরে তাওবাহ করেছে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নিয়েছে। তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة৩৯. অতঃপর সীমালংঘন করার পর কেউ তওবা করলে ও নিজেকে সংশোধন করলে নিশ্চয় আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(১)

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة৫৫. তোমাদের বন্ধু(১) তো কেবল আল্লাহ, তার রাসূল(২) ও মুমিনগণ- যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং তারা বিনীত।(৩)=৫৬. আর যে আল্লাহ, তার রাসূল ও মুমিনগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তবে নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী।(১)

নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পছন্দ করেন না।লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি

সূরাঃ ৩/ আলে-ইমরান | Al-i-Imran | سورة آل عمران =৩২. বলুন, ‘তোমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য কর। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পছন্দ করেন না।(১)


সূরাঃ ৯/ আত-তাওবা | At-Tawba | سورة التوبة৭৮. তারা কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদের অন্তরের গোপন কথা ও তাদের গোপন পরামর্শ জানেন এবং নিশ্চয় আল্লাহ গায়েবসমূহের ব্যাপারে সম্যক জ্ঞাত?

সূরাঃ ৩/ আলে-ইমরান | Al-i-Imran | سورة آل عمران ১৩১. আর তোমরা সে আগুন থেকে বেঁচে থাক যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।(১)


Surah Baqarah ১৬১. নিশ্চয়ই যারা কুফর করেছে এবং কাফের অবস্থায় মারা গেছে, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ ও সকল মানুষের লা'নত।

Surah Baqarah ৮৬. তারাই সে লোক, যারা আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন ক্রয় করে; কাজেই তাদের শাস্তি কিছুমাত্র কমানো হবে না এবং তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।

Surah Baqarah ৭৭. তারা কি জানে না যে, তারা যা গোপন রাখে এবং যা ব্যক্ত করে, নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন?

সূরাঃ ৪/ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء৬১. তাদেরকে যখন বলা হয় আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে আস, তখন মুনাফিকদেরকে আপনি আপনার কাছ থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবেন।(১)

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة১০. আর যারা কুফরী করে এবং আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী।

সূরাঃ ৪/ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء১৫১. তারাই প্রকৃত কাফির। আর আমরা প্রস্তুত রেখেছি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।(১)

সূরাঃ ৪/ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء১৬৬. কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন আপনার প্রতি যা তিনি নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে। তিনি তা নাযিল করেছেন নিজ জ্ঞানে। আর ফেরেশতাগণও সাক্ষী দিচ্ছেন। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।(১)

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة৩৬. নিশ্চয় যারা কুফর করেছে, কিয়ামতের দিন শাস্তি থেকে মুক্তির জন্য পণস্বরূপ যমীনে যা কিছু আছে যদি সেগুলোর সবটাই তাদের থাকে এবং তার সাথে সমপরিমাণও থাকে, তবুও তাদের কাছ থেকে সেসব গৃহীত হবে না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।(১)=৩৭. তারা আগুন থেকে বের হতে চাইবে কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হবার নয় এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।

সূরাঃ ৬/ আল-আন'আম | Al-An'am | سورة الأنعام ৩১. যারা আল্লাহর সাক্ষাতকে মিথ্যা বলেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে(১), এমনকি হঠাৎ তাদের কাছে যখন কিয়ামত উপস্থিত হবে(২) তখন তারা বলবে, হায়! এটাকে আমরা যে অবহেলা করেছি তার জন্য আক্ষেপ। আর তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে। সাবধান, তারা যা বহন করবে তা খুবই নিকৃষ্ট।

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة৮৬. আর যারা কুফরী করেছে ও আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে, তারাই জাহান্নামবাসী।

সূরাঃ ৬/ আল-আন'আম | Al-An'am | سورة الأنعام ২১. যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে বা তার আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? নিশ্চয় যালিমরা সাফল্য লাভ করতে পারে না।

  • সূরাঃ ৯/ আত-তাওবা | At-Tawba | سورة التوبة৬৩. তারা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতা করে(১) তার জন্য তো আছে জাহান্নামের আগুন, যেখানে সে স্থায়ী হবে? এটাই চরম লাঞ্ছনা।

তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে==

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة৩. তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু(১), রক্ত(২), শূকরের গোস্ত(৩), আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা পশু(৪), গলা চিপে মারা যাওয়া জন্তু(৫), প্রহারে মারা যাওয়া জন্তু(৬), উপর থেকে পড়ে মারা যাওয়া জন্তু(৭), অন্যপ্রাণীর শিং এর আঘাতে মারা যাওয়া জন্তু(৮) এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু(৯); তবে যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা ছাড়া(১০), আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলী দেয়া হয় তা(১১) এবং জুয়ার তীর দিয়ে ভাগ নির্ণয় করা(১২), এসব পাপ কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে(১৩); কাজেই তাদেরকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম(১৪), আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম(১৫)। অতঃপর কেউ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة৬২. আর তাদের অনেককেই আপনি দেখবেন পাপে, সীমালঙ্ঘনে ও অবৈধ খাওয়াতে তৎপর(১); তারা যা করে তা কতই না নিকৃষ্ট।

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة৭৬. বলুন, ‘তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদত কর যার কোন ক্ষমতা নেই তোমাদের ক্ষতি বা উপকার করার? আর আল্লাহ তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة৯০. হে মুমিনগণ! মদ(১), জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয় করার শর(২) তো কেবল ঘৃণার বস্তু, শয়তানের কাজ। কাজেই তোমরা সেগুলো বর্জন কর-যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।(৩)সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة(৯০) হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।[1]

১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক সম্প্রদায় হবে যারা যিনা-ব্যভিচার, রেশমী কাপড় ব্যবহার, মদ্যপান ও গান বাদ্যকে হালাল করবে। [বুখারীঃ ৫৫৯০] অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করবে ও তাওবাহ করবে না, সে আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে। [বুখারীঃ ৫৫৭৫]

সূরাঃ ৬/ আল-আন'আম | Al-An'am | سورة الأنعام ৫৯. আর(১) গায়েবের চাবি(২) তাঁরই কাছে রয়েছে(৩), তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারসমূহে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত রয়েছেন, তাঁর অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।

কুরআনের পরিভাষায় গায়েবের জ্ঞান ও অসীম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা'আলার। উদাহারণতঃ কে কখন কোথায় জন্মগ্রহণ করবে, কি কি কাজ করবে, কতটুকু বয়স পাবে, কতবার শ্বাস গ্রহণ করবে, কতবার পা ফেলবে, কোথায় মৃত্যুবরণ করবে, কোথায় সমাধিস্থ হবে এবং কে কতটুকু রিযক পাবে, কখন পাবে, বৃষ্টি কখন, কোথায়, কি পরিমাণ হবে, অনুরূপভাবে স্ত্রী লোকের গর্ভাশয়ে যে ভ্রূণ অস্তিত্ব লাভ করেছে, কিন্তু কারো জানা নেই যে, পুত্র না কন্যা, সুশ্রী না কুশ্রী, সৎস্বভাব না বদম্বভাব ইত্যাদি বিষয়সমূহ যা সৃষ্ট জীবের জ্ঞান ও দৃষ্টি সীমা থেকে উহ্য রয়েছে। সুতরাং (وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ) এর অর্থ এই দাঁড়ালো যে, গায়েবী বিষয়ের ভাণ্ডার আল্লাহরই কাছে রয়েছে। কাছে থাকার অর্থ করায়ত্ত ও মালিকানায় থাকা। উদ্দেশ্য এই যে, গায়েবী বিষয়ের ভাণ্ডারসমূহের জ্ঞান তার করায়ত্ত এবং সেগুলোকে অস্তিত্ব দান করা অর্থাৎ কখন কতটুকু অস্তিত্ব লাভ করবে- তাও তার সামর্থ্যের অন্তর্গত। কুরআনুল কারীমের অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ “প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার আমার কাছেই রয়েছে। কিন্তু আমি প্রত্যেক বস্তু একটি বিশেষ পরিমাণে নাযিল করি।” [সূরা আল-হিজর: ২১]

আল্লাহ তা‘আলা সূরা হুজুরাতের ১২ নং আয়াতে বলেছেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱجۡتَنِبُواْ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلظَّنِّ إِنَّ بَعۡضَ ٱلظَّنِّ إِثۡمٞۖ وَ لَا تَجَسَّسُواْ وَلَا يَغۡتَب بَّعۡضُكُم بَعۡضًاۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمۡ أَن يَأۡكُلَ لَحۡمَ أَخِيهِ مَيۡتٗا فَكَرِهۡتُمُوهُۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ تَوَّابٞ رَّحِيمٞ ١٢﴾ [الحجرات: ١٢]

“হে মুমিনগণ তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোনো কোনো অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إيَّاكُمْ والظَّنَّ فَإنَّ الظَّنَّ أكْذَبُ الْحَدِيثِ ولا تَحَسَّسُوا ولاتَجَسَّسوا ولاتَنَافَسُوا ولا تّحَاسَدُوا ولاتّبَاغَضُوا ولا تَدَابَرُوا وكُونُوا عِبَادَ اللهِ إخْوانًا»

“খবরদার! তোমরা অবশ্যই অনুমান থেকে দূরে থাকবে। কারণ, অনুমাণই হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় জানার চেষ্টা করবে না। গোপন দোষ অনুসন্ধান করবে না, পরস্পর হিংসা করবে না, পরস্পরে বিদ্বেষে লিপ্ত হবে না এবং পরস্পরে শত্রুতা ও সম্পর্কচ্ছেদ করবে না। তোমরা পরস্পরে আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।”[33]

এভাবে আমরা জানতে পারছি যে, অনুমানে কথা বলা এবং অন্যের দোষ অনুসন্ধান করা হারাম। শুধু তাই নয়, অনুসন্ধান ছাড়াও যদি অন্যের কোনো দোষত্রুটি মানুষ জানতে পারে তা তার অনুপস্থিতিতে উল্লেখ করা গীবত ও হারাম। 

পর্দা সম্পর্কে ==

সূরাঃ ৭/ আল-আ'রাফ | Al-A'raf | سورة الأعراف২৬. হে বনী আদম! অবশ্যই আমরা তোমাদের জন্য পোষাক নাযিল করেছি, তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকা ও বেশ-ভূষার জন্য। আর তাকওয়ার পোষাক(১), এটাই সর্বোত্তম।(২) এটা আল্লাহ্‌র নিদর্শনসমূহের অন্যতম, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।(৩)

সূরাঃ ৯/ আত-তাওবা | At-Tawba | سورة التوبة৬৮. মুনাফেক পুরুষ, মুনাফেক নারী ও কাফেরদেরকে আল্লাহ্‌ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাহান্নামের আগুনের, যেখানে তারা স্থায়ী হবে, এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদেরকে লা'নত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি;

শয়তানি কাজ

সূরাঃ ৭/ আল-আ'রাফ | Al-A'raf | سورة الأعراف৩১. হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক গ্রহন কর।(১) আর খাও এবং পান কর কিন্তু অপচয় কর না।(২) নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।

Tuesday, May 18, 2021

তোমার রবের পক্ষ থেকে পুরস্কার, এক যথার্থ উপহার —আন-নাবা

 

তোমার রবের পক্ষ থেকে পুরস্কার, এক যথার্থ উপহার —আন-নাবা

নিঃসন্দেহে আল্লাহর প্রতি সদাসতর্কদের জন্যই রয়েছে চূড়ান্ত সফলতা— বাগানের পর বাগান, আঙ্গুরের সমাহার, আকর্ষণীয় মানানসই জুটি, উপচে পড়া পানপাত্র। সেখানে তারা কোনো ধরনের ফালতু কথা বা মিথ্যা কথা শুনবে না —তোমার রবের পক্ষ থেকে পুরস্কার, এক যথার্থ উপহার। —আন-নাবা ৩১-৩৬

নিঃসন্দেহে আল্লাহর প্রতি সদাসতর্কদের জন্যই রয়েছে চূড়ান্ত সফলতা

আল্লাহ تعالى আছেন এবং তিনি আমাদের সব কাজ দেখছেন, সব কথা শুনছেন এবং সব চিন্তা বুঝতে পারছেন —এই ব্যাপারে যারা সদা-সতর্ক থাকে এবং তাঁর ভয়ে নিজের কথা-কাজ-চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করে, তারাই হচ্ছেন মুত্তাকী অর্থাৎ তাকওয়াবান। শুধুমাত্র তাকওয়াবানদেরকে আল্লাহ تعالى নিশ্চয়তা দিয়েছেন চূড়ান্ত সফলতার।

কেন তাকওয়া এত গুরুত্বপূর্ণ? শুধু নামাজ, রোজা, হাজ্জ করলেই কি যথেষ্ট নয়?

তাকওয়া নেই এমন পাঁচ-ওয়াক্ত-নামাজী বাসায় এসে পরিবারের সাথে, কাজের লোকের সাথে, এমনকি নিজের সন্তানের সাথে দানবের মত আচরণ করে। তাকওয়া নেই এমন হাজ্জি ঘুষ খেয়ে হজ্জে যায় এবং হজ্জ থেকে ফিরে এসে আবার ঘুষ খায়। তাকওয়া নেই এমন দাড়িওয়ালা পণ্যে ভেজাল দেয়, কমদামী মাল বেশী দামে চালিয়ে দেয়, কাগজপত্রে মিথ্যা কথা লিখে অন্যায় সুবিধা নেয়, অফিসে লুকিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করে, নামাজ পড়তে বের হয়ে আর সহজে কাজে ফেরত আসে না ইত্যাদি। —ধর্মীয় বেশভূষাধারী এই মানুষগুলোর স্বভাব এবং কাজের জন্য ইসলামের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়, কারণ এদেরকে দেখে অন্যেরা মনে করে যে, এটাই হচ্ছে ইসলাম ধর্মের শিক্ষা। ইসলামের সবচেয়ে বড় ক্ষতি তখন এরাই করে।

তাকওয়া হচ্ছে সবসময় সতর্ক থাকা যে, একজন প্রচণ্ড ক্ষমতাধর সত্ত্বা সবসময় আপনার দিকে তাকিয়ে আছেন। একইসাথে তিনি দুজন অদৃশ্য সত্তাকে আদেশ করেছেন প্রতি মুহুর্তে আপনার গতিবিধি নজর রাখার জন্য। এই পুরো মহাবিশ্ব তাঁর হাতের মুঠোয়। আপনি তাঁকে এক মুহূর্তের জন্যও ফাঁকি দিতে পারবেন—এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। —এই উপলব্ধি থেকে যারা নিজেদেরকে দুনিয়ার প্রলোভন থেকে বাঁচিয়ে চলেন এবং ‘লোকে কী বলবে’-কে ভয় না পেয়ে বরং ‘আমার প্রভু কী বলবেন’-কে বেশি ভয় পান — তারাই তাকওয়াবান, তারাই মুত্তাকী।

যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ উপলব্ধি করছে না যে, একদিন তাকে আল্লাহর تعالى সামনে দাঁড়িয়ে সব কাজের জবাব দিতে হবে— ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে ধর্ম শিখিয়ে বেশি লাভ হবে না। ধর্ম তার কাছে শুধুই কিছু তত্ত্ব কথা হয়ে থাকবে। ধর্মীয় নিয়মকানুনগুলো মানার জন্য সে কোনো আগ্রহ খুঁজে পাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য মানুষ তাকে দেখতে পাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকবে। তারপর একা হলেই তার আসল চেহারা বের হয়ে যাবে। দেশের আইন-কানুন তাকে হয়তো সমাজে, ঘরের বাইরে অন্যায় করা থেকে দূরে রাখতে পারবে। কিন্তু কোনো নির্জন রাস্তায়, অন্ধকার পার্কে, নিজের ঘরের ভেতর, নিজের পরিবারের সাথে, নিজের সাথে জঘন্য কাজ করা থেকে তাকে আটকাতে পারবে না। এর জন্য একমাত্র সমাধান হচ্ছে তাকওয়া এবং বিশেষ করে কিয়ামতের বিচারের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস।

যারা আল্লাহর تعالى প্রতি সাবধান থেকে নিজেদেরকে পাপ থেকে দূরে রাখবেন এবং তাঁর আনুগত্য করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন, তাদের জন্যই রয়েছে অন্তিম সফলতা। সেই সফলতার কিছু চিত্র আল্লাহ تعالى আমাদেরকে দিয়েছেন—

বাগানের পর বাগান, আঙ্গুরের সমাহার, … উপচে পড়া পানপাত্র।

জান্নাতে থাকবে حدائق হাদাইক অর্থাৎ একাধিক ব্যক্তিগত বাগান। চারদিকে সারি সারি খেজুর গাছের মনোহর সীমানার ভেতরে থোকা-থোকা মিষ্টি আঙ্গুরের বাগান, অপূর্ব ফুলের সমাহার। এরকম একটা দুটো নয়, অগণিত ব্যক্তিগত বাগানের মালিক হবে প্রতিটি জান্নাতি। সেই বাগান ভর্তি থাকবে রকমারি ফলের সমাহার। এমন সুস্বাদু ফল, যার স্বাদ আমরা এখন কল্পনাও করতে পারবো না। সেখানে থাকবে না ফরমালিন এবং কার্বাইডের দুশ্চিন্তা। থাকবে না কোনো ভেজাল খাবার। নিশ্চিন্তে যত ইচ্ছা খাও। অসুস্থ হওয়ারও ভয় নেই।

জান্নাতিরা নরম গালিচায় বসে, আয়েস করে বালিশে হেলান দিয়ে, হালকা রোদে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেবে। সামনে তাকিয়ে উপভোগ করবে আল্লাহর تعالى নিজের পরিকল্পনায় তৈরি করা বিশাল বাগানের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। যতদূর চোখ যায়, অকল্পনীয় সুন্দর দৃশ্য। যতক্ষণ মন চাইবে বসে বসে দেখবে। অন্ধকার হয়ে যাওয়ার তাড়া নেই। রান্না করার তাগাদা নেই। কাজে যাওয়ার চিন্তা নেই বা পরীক্ষার পড়ার ভয় নেই। —শুধুই অফুরন্ত অবসর।

একইসাথে সামনে সারি সারি দামি পান-পাত্রে রাখা থাকবে অমৃত সুধা। সেখান থেকে একটার পর একটা পাত্র নিয়ে চুমুক দেবে, আর তীব্র আনন্দে হারিয়ে যাবে। যত ইচ্ছা পান করবে। কোনো নিষেধ নেই। বাথরুমে যাওয়ারও দরকার নেই।

জান্নাতে এত এত আনন্দ আরও বহু গুণে বেড়ে যাবে, কারণ তার পাশে বসে থাকবে–

আকর্ষণীয় মানানসই জুটি

কিছু অনুবাদ এবং তাফসিরে كواعب أترابا — কাওয়াইবা আতরাবা অর্থ করা হয় সমবয়স্কা নব যৌবনা যুবতিরা, হুর এবং আরও কিছু অর্থ, যা পুরুষদের জন্য বড়ই আকর্ষণীয়। এগুলো পড়ে নারীদের মন খারাপ করার দরকার নেই। কারণ সেই অর্থগুলো এই আয়াতের সম্ভাব্য অর্থগুলোর একটি। কাওয়াইবা আতরাবা-এর অন্যান্য অর্থ হলো আকর্ষণীয় মানানসই জুটি, সমবয়স্ক সঙ্গী, গৌরবোজ্জ্বল সঙ্গী ইত্যাদি। যে ধরনের সঙ্গী হলে তারা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হবে এবং তাদের সঙ্গ সবচেয়ে বেশি উপভোগ করা যাবে, একদম সেরকম মনের মতো সঙ্গী।[১৮]

জান্নাতে সঙ্গীরা হবে সমবয়স্ক তরুণ-তরুণী। কারণ সমবয়স্ক সঙ্গীর সাথেই একান্তে থাকা যায়। মনের কথা খুলে বলা যায়। আনন্দের অভিজ্ঞতাগুলো নিঃসঙ্কোচে উপভোগ করা যায়। বয়সের পার্থক্য হলে সঙ্গ ঠিক পুরোপুরি উপভোগ করা যায় না। জান্নাতে গিয়ে একজন তরুণ যদি তার বৃদ্ধা স্ত্রীকে পায় অথবা একজন তরুণী যদি তার বৃদ্ধ স্বামীকে পায়, তাহলে তো আফসোস থেকে যাবে।

এখানে একটা চিন্তার ব্যাপার রয়েছে: কেন আল্লাহ تعالى জান্নাতে সঙ্গীদের ব্যাপারে এত গুরুত্ব দিয়েছেন? কু’রআনে তিনি কয়েকবার জান্নাতের সঙ্গীদের কথা বিশেষভাবে বলেছেন। নিশ্চয়ই সঙ্গী একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তা না হলে আল্লাহ تعالى জান্নাতের অসংখ্য সুখের মধ্যে থেকে সঙ্গীকে আলাদা করে গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করতেন না।।

আল্লাহ تعالى মানুষকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, একটি বয়সের পর থেকে তার মনের মধ্যে একজন সঙ্গীর জন্য একধরনের মানসিক শূন্যতা তৈরি হয়, যেটা অন্য কিছু দিয়ে পূরণ করা যায় না। প্রথম মানুষ আদম عليه السلام এর মধ্যেও এই শূন্যতা ছিল। তিনি জান্নাতের মতো অনন্ত সুখের জায়গায় থেকেও একা বোধ করতেন। তার এই শূন্যতা দূর করার জন্য আল্লাহ تعالى তাকে একজন সঙ্গিনী দিয়েছিলেন।

আদম عليه السلام এর পর থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষ এসেছে, সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক—তাদের প্রত্যেকের মনের ভেতরেই একটা বয়সের পর থেকে একজন সঙ্গীর জন্য একধরনের শূন্যতা কাজ করে। এই মানবীয় বৈশিষ্ট্যটি আল্লাহ্‌-ই تعالى মানুষের মাঝে দিয়ে দিয়েছেন। সেই শূন্যতা পূরণ করার জন্য আল্লাহ تعالى আমাদেরকে হালাল উপায়ে বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছেন কিশোর বয়সে পড়ার পর থেকেই, সংসার চালানোর মতো সামর্থ্য থাকলে।

কিন্তু অনেকে সেই হালাল উপায় বেছে না নিয়ে, অনেক সময় বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, সমাজের চাপে পড়ে অনেক বয়স পর্যন্ত বিয়ে না-করে, বিভিন্ন ধরনের হারাম উপায়ে সেই শূন্যতা পূরণ করার চেষ্টা করে। অনেকে সেটা করে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের মাধ্যমে। অনেকে করে সারাদিন রোমান্টিক মুভি, হিন্দি গানে বুঁদ হয়ে থেকে। আবার অনেকে করে সারাদিন ফেইসবুকে চ্যাট করে, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে মোবাইল হার্ড ডিস্কে করে নোংরা ভিডিও কপি করে এনে।

এগুলোর কোনোটাই তার মনের ভেতরের সেই শূন্যতাকে পূরণ করে না, শুধুই পূরণ করার একটা সাময়িক ধোঁকা দেয় এবং তার মধ্যে একধরনের মানসিক বিকৃতি তৈরি করে। এরপরে সে আর স্বাভাবিক মানুষের মতো পরিষ্কার মনে সুস্থ চিন্তা করতে পারে না। একজন স্বাভাবিক মানুষ পারিবারিক জীবনে যতটা সুখী হতে পারে, তার সঙ্গীকে যতটা উপভোগ করতে পারে, সেটা আর সে কখনো পারে না। তার বিবাহিত জীবন হয় হতাশায়, আশাভঙ্গে ভরা।

মানুষের এই মানসিক চাহিদাকে পূরণ করে, মনে স্থায়ী শান্তি পাবার একমাত্র উপায় হচ্ছে হালাল উপায়ে বিয়ে। কিন্তু সম্পূর্ণ ইসলাম বহির্ভূত নিয়মে, কখনো বা সংস্কৃতির নামে হারাম সব অনুষ্ঠান করে প্রচুর খরচ করে বিয়ে করে, বিরাট অঙ্কের ঋণের বোঝা নিয়ে সংসার শুরু করে সেই শূন্যতা পুরোপুরি পূরণ করা যায় না এবং সংসারে শান্তিও আসে না। একইভাবে লিভ টুগেদার করে—যেখানে কি না আপনার সঙ্গী যেকোনো মুহূর্তে আপনাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে—সেটাও আমাদের ভেতরের এই শূন্যতা, নিরাপত্তার আকাঙ্ক্ষাকে মেটাতে পারে না। এই সমস্যার একমাত্র সম্পূর্ণ সমাধান হচ্ছে আল্লাহর تعالى দেওয়া সমাধান—একজন তাকওয়াবান মানুষকে জীবন-সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়ে, মুহাম্মাদ عليه السلام দেখানো উপায়ে পরিমিত ব্যয় করে, অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান করে বিয়ে করা।

“আর তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি হল যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই সত্তা থেকে সহধর্মিণী সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তোমরা তাদের (স্ত্রী) মধ্যে প্রশান্তি খুঁজে পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা আর দয়া তৈরি করেছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে তাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা চিন্তা করে। [আর-রুম ২১]”

জীবনটা যতই সংগ্রামের হোক না কেন, একজন তাকওয়াবান সঙ্গী/সঙ্গিনী সাথে থাকলে যে কত সহজে আল্লাহর تعالى উপর আস্থা রেখে জীবনটা পার করা যায়, নিজের ঈমানকে ধরে রাখা যায়, হাজারো কষ্টের মধ্যেও মনে শান্তি ধরে রাখা যায়—সেটা যাদের নেই, তাদেরকে বলে বোঝানো যাবে না। আসুন আমরা আমাদের জীবন সঙ্গীর সাথে আরেকটু সময় ব্যয় করি: তাকে আল্লাহর تعالى আরও কাছে নিয়ে যাবার জন্য। কারণ সে শুধু একাই যাবে না, সে আপনাকেও সাথে নিয়ে আল্লাহর تعالى কাছে যাবে এবং একদিন সে-ই আপনাকে ঈমান হারিয়ে ফেলার মতো কঠিন সব ঘটনায় শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরে রাখবে, যাতে করে আপনি পথ হারিয়ে না ফেলেন। শেষ পর্যন্ত একদিন যখন অনেক সংগ্রাম করে জান্নাতে পৌঁছাবেন এবং জান্নাতের অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে হঠাৎ করে এক অপার্থিব অতুলনীয় সৌন্দর্যের মুখোমুখি হয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে থমকে দাঁড়াবেন, তাকিয়ে দেখবেন আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আপনার সেই ভালোবাসার জীবন সঙ্গী।

সেখানে তারা কোনো ধরনের ফালতু কথা বা মিথ্যা কথা শুনবে না

জান্নাতে কেউ বাজে কথা বলে না। দুনিয়াতে থাকতে মানুষ একে অন্যের নামে বদনাম, কুটনামি করত। খেলা, রাজনীতি, তারকাদের ফালতু খবর নিয়ে দিনরাত মশগুল থাকত। ঝগড়া-বিবাদ, গলাবাজি, অন্যের কাছে নিজেকে বড় বলে জাহির করার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকতো —এগুলো ছিল নিজের এবং অন্যের মানসিক অশান্তির অন্যতম কারণ। জান্নাতে এগুলোর কিছুই থাকবে না। হাজার হোক জান্নাতবাসীরা হচ্ছেন উঁচু স্ট্যান্ডার্ডের মানুষ। তারা দুনিয়াতে থাকতেই অনর্থক কথা, অশান্তির কথা বলে বেড়াতেন না। জান্নাতে তো কখনই বলবেন না। এই একটি জিনিস না থাকার কারণেই জান্নাতবাসীদের শান্তি বহুগুণে বেড়ে যাবে।

এই আয়াত থেকে আমরা একটি উপদেশ পাই। বাজে কথা থেকে দূরে থাকলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। আমরা যদি দুনিয়াতে বাজে কথা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি, তাহলে আমরা দুনিয়াতেই অনেক বেশি মানসিক শান্তিতে থাকবো। নিজেদের মুখকে নিয়ন্ত্রণ করে আমরা যেমন নিজেকে এবং অন্যেকে মানসিক শান্তি দেবো, ঠিক একইভাবে বাজে কথা, অনর্থক কথা বলে বেড়ায় এমন মানুষদের থেকে বুদ্ধি খাটিয়ে নিজেকে দূরে রেখে নিজেদেরই মানসিক শান্তি বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে পারব।

মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, টেলিভিশন এবং সামাজিক গণমাধ্যম (যেমন ফেইসবুক) থেকে মানুষ যখন নিজেকে দূরে রাখতে পারে, তখন তার মানসিক শান্তি বহুগুনে বেড়ে যায়। এর কারণ এগুলো হচ্ছে বাজে কথার অনন্ত উৎস। কুটনামি, গালাগালি, কাঁদা ছোড়াছুড়ি, ফাঁকা গলাবাজি, ভুয়া খবর, প্রতারণা, মিথ্যা —এই সবকিছুর বাজার হচ্ছে টিভি এবং ফেইসবুক।

গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের এগুলোর প্রতি ঝোঁক থাকে, কারণ এগুলো থেকে তারা একধরনের সাময়িক উত্তেজনা পায়। ঠিক যে ধরনের উত্তেজনা মানুষ অল্প পরিমাণে মাদক নিলে পায়। টিভি এবং ফেইসবুক দুটোই মানুষের মস্তিষ্কে সেই একই কেমিক্যাল ‘ডোপামিন’ নিঃসরণ করে, যা কোকেইন (মাদক) নিলে নিঃসরণ হয়। কিন্তু এই ডোপামিন হচ্ছে আসক্তির অন্যতম কারণ।[৪১১] যার কারণে যখন টিভি এবং ফেইসবুক বন্ধ হয়ে যায়, একধরনের বিষণ্ণতা, ক্লান্তি এসে ভর করে, যা কাটানোর জন্য আবার কখন টিভি এবং ফেইসবুকে যাবে, তার জন্য অস্থিরতা চলে আসে। এভাবে মানুষ এক ধরনের ‘উত্তেজনা-হতাশা-অস্থিরতা-উত্তেজনা’ চক্রে পড়ে যায়। এই চক্র থেকে সে আর সহজে বের হতে পারে না।

—এই অসুস্থ চক্র জীবনে অশান্তি নিয়ে আসে। মানুষকে নিরন্তর উত্তেজনার দাস বানিয়ে ফেলে। ঠিক এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে উত্তেজনা আসক্তির ফাঁদে ফেলার বাণিজ্যের উপর দাড়িয়ে আছে টিভি এবং ফেইসবুক। এই আসক্তিই তাদের ব্যবসা, তাদের আয়ের অন্যতম উৎস।

বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সফল মানুষদের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে, তারা কেউ নিয়মিত টিভি এবং ফেইসবুক করেন না। তাদের এগুলোর ব্যবহার যোগাযোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মাত্র ৯% ফেইসবুক ব্যবহারকারী যোগাযোগ করার জন্য ফেইসবুক ব্যবহার করেন। আর বাকি ৯১% ব্যবহারকারী ঘন ঘন উত্তেজনার ডোজ নেওয়ার জন্য নিয়মিত ফেইসুক ব্যবহার করেন। এরা একদিনও ফেইসবুক ভুলে থাকতে পারে না।

ফেইসবুকের যতই উপকারিতা থাকুক না কেন, বাস্তবতা হলো পুরো একটি প্রজন্মের চিন্তার গভীরতা নষ্ট করে দিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা তৈরি করছে এটি। মাত্র কয়েক বছরে এটি কোটি মানুষের মধ্যে নারসিসিজম নামক একটি মানসিক ব্যাধির মহামারী ছড়িয়ে দিয়েছে, যা হচ্ছে অন্যের কাছে নিজেকে সুখী, সফল, গুণবান হিসেবে জাহির করে এক প্রতারণায় ভরা জীবন পার করার অন্ধ মোহ।[৪১২][৪১৩]

তোমার রবের পক্ষ থেকে পুরস্কার, এক যথার্থ উপহার

আমাদের কোনো বিশেষ অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী যখন নিজে আমাদেরকে পুরস্কার দেবেন বলে আমন্ত্রণ জানান, তখন আমাদের খুশি দেখে কে? আমাদের নিকট আত্মীয়রা গর্ব করে বলে বেড়ায়, “ওকে প্রধানমন্ত্রী নিজে পুরস্কার দেওয়ার জন্য ডেকেছেন! আমাদের চৌদ্দগুষ্টিতে কেউ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার পায়নি। কত বড় সম্মান আমাদের!” আর এই আয়াতে আল্লাহ تعالى বলছেন যে, মুত্তাকিরদের পুরস্কার আসবে তাঁর কাছ থেকে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে তিনি تعالى নিজে সেই পুরস্কার দেবেন। বিশ্বজগতের প্রতিপালক নিজে এসে পুরস্কার দেওয়া কী বিরাট ব্যাপার হতে পারে, সেটা আমরা কল্পনাও করতে পারবো না। কিয়ামতের দিন এই সৌভাগ্যবান মানুষগুলোর কোনো ভয় থাকবে না, যেদিন আমরা সবাই ভয়ে, আতঙ্কে থরথর করে কাঁপতে থাকবো। যেদিন আমরা দুনিয়ায় করা হাজারো ভুলের জন্য দুঃখে, আফসোসে মরে যেতে চাইবো, সেদিন এই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠদের আনন্দের কোনো সীমা থাকবে না। তারা থাকবেন আল্লাহর تعالى একান্ত সান্নিধ্যে, চিরসুখী।

তাঁর পক্ষ থেকে, যিনি আকাশগুলো এবং পৃথিবী সহ এদের মধ্যে যা কিছুই আছে, তার সবকিছুর প্রতিপালক; অত্যন্ত দয়ালু তিনি। কারো কোনো ক্ষমতাই থাকবে না তাঁর সামনে কিছু বলার। সেদিন রুহ এবং ফেরেশতারা সারি-সারি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। পরম দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া কেউ কোনো কথাই বলতে পারবে না এবং শুধুই সঠিক কথা বলবে।

এবার দৃশ্যপট ফিরে গেলো কিয়ামতের দিনে। এক ভিন্ন জগতে মানুষ আবার জন্ম নিয়েছে। দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল সমতল ভূমিতে। উপরে আকাশ এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত চিঁড়ে ফাকা করা। তার ভেতরে দিয়ে উপরের জগত থেকে অতি উন্নত সত্তারা উড়ে এসে সারি সারি হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে। বিরাট একটা কিছু ঘটানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এক সুশৃঙ্খল বাহিনী।

এরপর এক বিশাল আকৃতির একজনের আবির্ভাব হলো পুরো দিগন্ত জুড়ে। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি সেই অতিজাগতিক বাহিনীর প্রধান। তিনি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন। পুরো বাহিনী নিঃশব্দে অপেক্ষা করছে। সবাই অপেক্ষা করছে আকাশের উপরে অদৃশ্য যিনি আছেন, সেই সর্বপ্রধান, সর্বশক্তিমানের নির্দেশের। তাঁর নির্দেশ পাওয়া মাত্র শুরু হয়ে যাবে শেষ আদালত।

নিচে অজস্র মানুষ উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছে কখন সেই আদালতে তার ডাক পড়বে।

“এগুলো সব গালগপ্প। কীভাবে মানুষ এই সব গাঁজাখুরি কাহিনী বিশ্বাস করে? মানুষ মরে মাটিতে মিশে যায়। তার দেহ পচে গলে পোকামাকড়, উদ্ভিদের খাবার হয়ে যায়। কীভাবে আবার সেই মানুষ হুবহু আরেকবার জন্ম নেওয়া সম্ভব? মানুষের প্রতিটি কথা নাকি রেকর্ড করা হচ্ছে? কোথায়? আশেপাশে কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না। মানুষের হাত-পা নাকি সাক্ষী দেবে? হাত-পা আবার কথা বলতে পারে নাকি? এই সব বাচ্চাদের গল্প বড় মানুষরা বিশ্বাস করে কীভাবে?”

—কিছু মানুষের কাছে মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান, কিয়ামতের দিনের বিচার, জান্নাত-জাহান্নাম এসব হচ্ছে গালগপ্প, অশিক্ষিত মানুষের বিশ্বাস। অত্যাচারিত মানুষের জন্য ফালতু সান্ত্বনার কথা। দুনিয়াতে যারা কিছু পায় না, তাদের বুঝ দেওয়ার জন্য। এরা অবাক হয় যে, ধর্ম কোনো বুদ্ধিমান মানুষ বিশ্বাস করতে পারে নাকি? তাও আবার এই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে?

এদের জন্য এই সুরাহ্‌’য় শেষ সাবধান বাণী—

সেদিনটি অনিবার্য। তাই যে চায়, সে তার রবের কাছে আশ্রয় খুঁজে নিক। আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সাবধান করে দিলাম। যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি দেখবে সে কী করে এসেছে, আর অস্বীকারকারী বিলাপ করবে, “হায়, আমি যদি ধুলোয় মিশে যেতাম!”

কুরআনের কিছু আয়াত

 কুরআনের কিছু আয়াত এখানে এমন কিছু কুর'আনের আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো আমাদের অন্তরকে শীতল করবে এবং পরকালীন প্রস্তুতি নিতে সাহায্য ক...